BLANTERVIO103

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের প্রকৃত সত্য উন্মোচন

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের প্রকৃত সত্য উন্মোচন
Saturday, February 29, 2020


কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অর্জুনের শিব দর্শন তথা মহাভারতের ঐতিহাসিক ধর্মযুদ্ধের মহর্ষি কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন বেদব্যাস দ্বারা প্রকৃত সত্য উন্মোচন
সনাতনী সুধী, আমরা সকলেই অবগত আছি যে, দ্বাপরযুগ ও কলিযুগের সন্ধিক্ষণে ধর্মযুদ্ধ তথা কুরুক্ষেত্র নামক যুদ্ধের ঘটনা ঘটেছিল। বিষ্ণুর অংশ অবতার শ্রীকৃষ্ণ তথা সত্য যুগের আদিতথ্যানুসারে নারায়ণ ঋষির অবতার ও নর ঋষির অবতার অর্জুন, পান্ডব পক্ষে যদুবংশ অংশীদারিত্ব রূপে কৃষ্ণ সেই অর্জুনের রথের সারথী হয়েছিলেন। একই বংশের দু'পক্ষান্তরে ধর্ম ও অধর্ম নিয়ে শুরু এবং অধর্ম্মের বিস্তার পরিমাণে বৃদ্ধি হওয়ার কারণে এই যুদ্ধের আরম্ভ হয়। যেহেতু ধর্ম স্থাপনের উদ্দেশ্যে এই সংগ্রাম হয়েছে! তাই সেই যুদ্ধকে ধর্মযুদ্ধ বলা হয়েছে।

সেই যুদ্ধের প্রারম্ভে নর ঋষির অবতার অর্জুন যুদ্ধে প্রস্তুত হতে অস্বীকৃত হন এবং নারায়ণ ঋষির অবতার শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে যোগ অবলম্বন করে ব্রহ্মবিদ্যা তথা ব্রহ্মজ্ঞান প্রদান করেন, যথারীতি যুদ্ধের জন্য উদ্ধৃত করেন। সেই যুদ্ধে দ্বাপরযুগের সকল মহারথী তথা শ্রেষ্ঠ শ্রেষ্ঠ ক্ষত্রিয় বীর যোদ্ধারা ধ্বংস প্রাপ্ত হন এবং ধর্ম প্রতিষ্ঠা হয়।

কিন্তু!!!!! দ্বাপরযুগের ও কলিযুগের সন্ধিক্ষণে যে ধর্ম যুদ্ধ হয়েছে, তা আদৌ কি এই বিভিন্ন অবতারগণের কার্যসিদ্ধি গুণে হয়েছে?? নাকি পরমাত্মা পরমব্রহ্মের নিছক এক উপলক্ষ্য স্বরূপ নীল নকশা ছিল এই কৃষ্ণ ও অর্জুন? অর্থাৎ, পরমাত্মা কখনও নিজে স্বশরীরে প্রকট হয়ে কিছু করেন না কিন্তু কারো মারফত তথা উপলক্ষ্য করেই কার্যসাধন করেন। ঠিক সেইভাবে সেই কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের ময়দানে উপলক্ষ্য ছিল কৃষ্ণ ও অর্জুন এবং পরমাত্মা স্বয়ম্ মহাদেব।

অনেকেই হয়তো বলতে পারেন যে, আমি নিজ সম্প্রদায়ের বা নিজের উপাস্যকে প্রধান বা শ্রেষ্ঠ রূপে উপস্থাপন করার চেষ্টায় জর্জরিত আছি। না, সুধী সনাতনী, আমি যা বলতে যাচ্ছি তা কাল্পনিক চরিত্র বা কথা নয়! আমি যা বলতে যাচ্ছি তা স্বয়ং সম্পূর্ণ রূপে শাস্ত্র অন্তর্গত এবং শাস্ত্রীয় তথ্য।

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের তথ্য বর্ণিত হয়েছে ভারত সংহিতা তথা মহাভারত গ্রন্থের মধ্যে এবং সেই মহাভারতের রচয়িতা হলেন কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন মহর্ষি বেদব্যাস, এছাড়াও সনাতন ধর্মের একমাত্র ও অদ্বিতীয় শাস্ত্র ও গ্রন্থ প্রবক্তা মহর্ষি বেদব্যাস। তাই আমি যা বলতে যাচ্ছি তা সেই মহর্ষি বেদব্যাস স্বয়ং নিজে বলে গেছেন মহাভারত গ্রন্থের মধ্যে এবং সেই সত্য উন্মোচন হয়েছিল স্বয়ং কুরুক্ষেত্র ময়দানের প্রধান যোদ্ধা অর্জুনের ভ্রম বা বিভ্রান্তি দূর করার প্রশ্নের উত্তর প্রদানের মাধ্যমে।

অর্থাৎ, কুন্তীনন্দন অর্জুন যুদ্ধের সময় এক দিব্য তেজস্বী পুরুষ লক্ষ্যে করেন এবং কুরুক্ষেত্র ময়দানে আগত মহর্ষি বেদব্যাসকে সেই কথাগুলি বর্ণনা করেন, তৎপর মহর্ষি বেদব্যাস সেই দিব্য পুরুষের নাম ও বর্ণনা করেন। সেই বর্ণনার প্রারম্ভ হয় জন্মান্ধ ধৃতরাষ্ট্রের জিজ্ঞাসার মাধ্যমে, আমি সেইখান থেকেই শুরু করছি...
(মহাভারত দ্রৌণপর্ব দ্ব্যধিকদ্বিশততমোহধ্যায়ঃ)

ধৃতরাষ্ট্র উবাচ

তস্মিন্নতিরথে দ্রোণে নিহতে পার্ষতেন বৈ।
মামকাঃ পান্ডবাশ্চৈব কিমকুর্ব্বন্নতঃ পরম্।।১
অনুবাদ:- ধৃতরাষ্ট্র বলিলেন—সঞ্জয়! ধৃষ্টদ্যুম্ন দ্বারা অতিরথী দ্রোণচার্যকে বধ করার পর, আমার ও পান্ডুপুত্রগণ তারপর কি করলো?॥১

সঞ্জয় উবাচ

তম্মিতিপথে দ্রোণে নিহতে পার্ষতেন বৈ।
কৌরবেষু চ ভগ্নেযু কুন্তীপুত্রো ধনঞ্জয়ঃ॥২
দৃষ্ট্বা সুমহদাশ্চৰ্যমাত্মনাে বিজয়াবহম্।
যদৃচ্ছয়াগতং ব্যাসং পপ্ৰচ্ছ ভরতষভ!॥৩
অনুবাদ:- সঞ্জয় বলিলেন, ভরতশ্রেষ্ঠ! ধৃষ্টদ্যুম্ন দ্বারা অতিরথী বীর দ্রোণাচার্যকে বধ করার পর যখন সমস্ত কৌরবপক্ষ নিস্তব্ধ দাড়িয়ে ছিলেন, সে সময় নিজেদের বিজয় প্রদানকারী অত্যন্ত আশ্চর্যময়ী ঘটনা দেখে কুন্তীপুত্র অর্জুন অকস্মাত্ সেখানে এসে উপস্থিত হওয়া ব্যাসদেবকে এই প্রকার জিজ্ঞাসা করিলেন॥২-৩

অৰ্জ্জুন উবাচ

সংগ্রামে ন্যহনং শত্রুন শরৌঘৌর্বিমলৌরহম্।
অগ্ৰতো লক্ষয়ে যান্তং পুরুষং পাবক প্ৰভম্॥৪
অনুবাদ:- অৰ্জ্জুন বলিলেন—মহর্ষি! যখন আমি আমার নিৰ্ম্মল বাণসমূহদ্বারা শত্ৰুসংহার করছিলাম, সে সময় আমি দেখলাম যে, অগ্নির সমান এক তেজস্বী পুরুষ আমার আগে আগে চলছিল।

জ্বলন্তং শূলমুদ্মম্য যাং দিশং প্রতিপদ্মতে।
তস্যাং দিশি বিদিৰ্যন্তে শত্ৰবাে মে মহামুনে!।।৫
অনুবাদ:- মহামুনে! উনি চলার সময় শূলহাতে যেদিকে যাচ্ছিলেন সেদিকে আমার শত্রু বিদীর্ণ হয়ে যাচ্ছিল।
তেন ভগ্নানরীন্ সৰ্বান্ মদ্ভগ্নান মন্যতে জনঃ।
তেন ভগ্নানি সৈন্যানি পৃষ্ঠতােহনুব্রজাম্যহম্।।৬
অনুবাদ:- উনিই আমার সমস্ত শত্রুকে পরাভূত করেছেন কিন্তু লোকেরা ভাবছেন যে আমি তাদের পরাভূত করেছি। শত্রুদের সকল সৈন্যদের উনিই নষ্ট করেছেন, আমি তো কেবল উনার পিছনে পিছনে চলছিলাম মাত্র।

ভগবংস্তন্মমাচক্ষ্ব কো বৌ স পুরুষােত্তমঃ।
শূলপাণির্ময়া দৃষ্টস্তেজসা সূৰ্যসন্নিভঃ॥৭
অনুবাদ:- ভগবন! আমায় বলুন, সেই মহাপুরুষ কে? আমি উনার হাতে ত্রিশূল দেখছিলাম, উনি সূর্যের সমান তেজস্বী ছিলেন।

ন পদ্ভ্যাং স্পৃশতে ভূমিং ন চ শূলং বিভুশ্চতি।
শূলাচ্ছুলসহস্রাণি নিষ্পেতুস্তস্য তেজসা॥৮
অনুবাদ:- উনি নিজের চরণ পৃথিবীতে স্পর্শকাতর করেননি। ত্রিশূলকে নিজের হাত থেকে কখনও আলাদা করেননি। উনার তেজ থেকে সেই ত্রিশূলের মধ্যে হতে নব নব সহস্র ত্রিশূল প্রকট হয়ে আমার শত্রুদের উপরে গিয়ে আঘাত হানছে, তাদের সংহার করছে।

ব্যাস উবাচ

প্রজাপতীনাং প্রথমং তৈজসং পুরুষং প্রভু।
ভুবনং ভূর্ভুবং দেবং সর্বলােকেশ্বরং প্রভুম্ ॥৯॥
র্ইশানং বরদং পার্থ দৃষ্টবানসি শঙ্করম্।
তং গচ্ছ শরণং দেবং বরদং ভুবনেশ্বরম্।।১০
অনুবাদ:- ব্যাস বললেন, অর্জুন, যিনি প্রজাপতিদের মধ্যে প্রথম, তেজঃস্বরূপ, অন্তর্যামী তথা সর্বসমর্থ, ভূলোক, ভূর্বলোকাদি সমস্ত যাঁর স্বরূপ, যিনি দিব্য বিগ্রহধারী তথা সম্পূর্ণ লোকের শাসক এবং স্বামী, তুমি সেই বরদায়ক ঈশ্বর ভগবান শঙ্করের দর্শন করেছো। তিনিই বরদ দেবতা সম্পূর্ণ জগতের ঈশ্বর, তুমি উনার শরণাপন্ন হও।
মহাদেবং মহাত্মানমীশানং জটিলং বিভূম্।
ত্র্যক্ষং মহাভুজং রুদ্রং শিস্বিনং চীরবাসসম্।।১১
অনুবাদ:- তিনিই মহান দেব, উনার হৃদয় মহান, তিনিই সত্রপর শাসনকারী, সর্বব্যাপী ও জটাধারী, উনি ত্রিনেত্র ও বিশাল বাহুধারী, রুদ্র উনার সংজ্ঞা, উনার মস্তকোপর শিখা তথা শরীরে বল্কল বস্ত্র শোভা পায়।

মহাদেবং হরং স্থাণুং বরদং ভুবনেশ্বরম্।
জগৎপ্রধানমজিতং জগৎপ্রীতিমধীশ্বরম্।।১২
অনুবাদ:- মহাদেব, হর ও স্থাণুআদি নামে প্রসিদ্ধ বরদায়ক ভগবান শিব সম্পূর্ণ ভুবনের স্বামী। উনিই জগতের কারণভূত অব্যক্ত প্রকৃতি স্বরূপ। উনি কারো কাছ থেকে পরাজিত হন না, জগতের প্রেম ও সুখের প্রাপ্তি উনার থেকেই হয়। উনিই সবার অধ্যক্ষ।

অগদ্মৌনিং জগদ্বিজং জয়িনং জগতো গতিম্।
বিশ্বাত্মানং বিশ্বসৃজং বিশ্বমূর্তিং যশস্বীনম্।।১৩
অনুবাদ:- উনিই জগতের উৎপত্তির স্থান, জগতের বীজ, বিজয়শীল, জগতের আশ্রয়, সম্পূর্ণ বিশ্বের আত্মা, বিশ্ববিধাতা, বিশ্বরূপ ও যশস্বী।

বিশ্বেশরং বিশ্বনরং কর্মণামীশ্বং প্রভুম্।
শম্ভুং স্বয়ম্ভুং ভুনেশং ভুতভব্যভবোদ্ভভম্।।১৪
অনুবাদ:- উনিই বিশ্বেশ্বর, বিশ্বনিয়ন্তা, কর্মের ফলদাতা ঈশ্বর ও প্রভাবশালী। উনিই সকলের কল্যাণকারী সয়ম্ভু। সম্পূর্ণ ভূতগণের স্বামী তথা ভূতনাথ, ভবিষ্য ও বর্তমানের কারণ তিনিই।

যোগং যোগীশ্বরং সর্বং সর্বলোকেশ্বরেশ্বরম্।
সর্বশ্রেষ্ঠং জগচ্ছ্রেষ্টং বরিষ্টং পরমেষ্টিনম্।।১৫
অনুবাদ:- তিনিই যোগ এবং যোগীশ্বর, তিনিই সর্ব্বস্বরূপ ও সম্পূর্ণ লোকঈশ্বরের ঈশ্বর তিনিই। সবার শ্রেষ্ঠ, সম্পূর্ণ জগতের শ্রেষ্ঠ ও শ্রেষ্ঠতম পরমেশ্বর তিনিই।

লোকত্রয়বিধাতারমেকং লোকত্রয়াশ্রয়ম্।
শুদ্ধাত্মানং ভবং ভীমং শশাঙ্ককৃতশোস্বরম্।।১৬
অনুবাদ:- ত্রিলোকের একমাত্র স্রষ্টা, ত্রিলোকের আশ্রয়, শুদ্ধাত্মা, ভব, ভীম ও চন্দ্রিমার মুকুট ধারণকারী তিনিই।

শাশ্বতং ভুধরং দেবং সর্ব্বাগীশ্বরেশ্বরম্।
সুধুর্জয়ং জগন্নাথং জন্মমৃত্যুজরাতিগম্।।১৭
অনুবাদ:- সেই সনাতন দেব পৃথিবীর ধারণকারী তথা বাগীশ্বরেরও ঈশ্বর তিনিই। উনাকে জয় করা অসম্ভব। সেই জগদীশ্বর জন্ম, মৃত্যু ও জরাদি বিকারেরও উর্দ্ধে।

জ্ঞানাত্মানং জ্ঞানগ্মং জ্ঞানশ্রেষ্ঠং সুদুর্বিদম্।
দাতারঞ্চৈব ভক্তানাং প্রসাদবিহিতান্ বরান্॥১৮
অনুবাদ:- তিনিই জ্ঞানস্বরূপ, জ্ঞানগম্য তথা জ্ঞানের শ্রেষ্ঠ, উনার স্বরূপের সমকক্ষ নেওয়া অত্যন্ত কঠিন ও অসম্ভব। উনি নিজের ভক্তকে কৃপাপূর্বক মনোবাঞ্চিত উত্তম ফল দিয়ে থাকেন।

তস্য পারিষদা দিব্যা রূপৈর্নানাবিধৈর্বিভােঃ!।
বামনা জটিলা মুণ্ডা হ্রষগ্রীবা মহােদরাঃ॥১৯
মহাকায়া মহােৎসাহা মহাকর্ণাস্তথাপরে।
আননৈর্বিকৃতৈঃ পাদৈঃ পার্থ বেষৈশ্চ বৈকৃতৈঃ॥২০
অনুবাদ:- ভগবান শঙ্করের দিব্য পার্ষদ বিভিন্ন রূপে দেখা যায়। সেখান থেকে কেউ বামন, কেউ জটাধারী, কেউ মুণ্ডিত মস্তকধারী এবং কেউ ছোট গর্দানধারী। কারো পেট বড় হয়ে থাকে তো কারো পুরো শরীর বিশালাকার হয়ে থাকে। কিছু পার্ষদস্বরূপে কান অনেক বড় বড় হয়। সেইসব বড় উৎসাহী হয়ে থাকে। কতজনের মুখ বিকৃত হয়ে থাকে আর কতজনের পৈর। অর্জুন! সেইসবের বেশভূষা অনেক বিক্রাল হয়।

ঈদৃশৈঃ স মহাদেবঃ পুজ্যমানাে মহেশ্বরঃ।
স শিবস্তাত তেজস্বী প্রসাদাদযাতি তেহগ্রতঃ।।২১
অনুবাদ:- এইরকম স্বরূপধারী সেইসব পার্ষদ মহান দেবতা ভগবান শঙ্করের সর্বদা পূজাঁ করে থাকেন। তৎপর! সেই তেজস্বী পুরুষের রূপে এই ভগবান শঙ্করই কৃপা করে তোমার আগে আগে চলেছিলেন।

তস্মিন্ ঘােরে সদা পার্থ সংগ্রামে রোমহর্ষণে।
দ্রোণিকর্ণকৃপৈগুপ্তাং মহেষ্বাসৌঃ প্রহারিভিঃ।।২২
কস্তাং সেনাং তদা পার্থ মনসাপি প্রধর্ষয়েৎ।
ঋতে দেবান্মহেষ্বাসাদ বহুরূপান্মহেশ্বরাৎ॥২৩
অনুবাদ:- কুন্তীনন্দন! সেই রোমাঞ্চকর ঘোর সংগ্রামে অশ্বত্থামা, কর্ণ ও কৃপাচার্যাদি প্রহারকুশল বড় বড় ধনুর্ধারী সুসজ্জিত সেই কৌরব সৈন্যকে সেই সময় বহুরূপধারী মহাধনুর্ধর ভগবান মহাদেব ছাড়া দ্বিতীয় কেউ ধ্বংস করতে পারত না।
স্থাতুমুৎসহতে কশ্চিন্ন তস্মিন্নগ্রতঃ স্থিতে।
ন হি ভূতং সমং তেন ত্রিপু লোকেষু বিদ্মনে।।২৪
অনুবাদ:- যখন উনিই সামনে এসে দাড়িয়ে যায় তো তখন উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতা বা সাহস কারো কি আছে?ত্রিলোকের মধ্যে কোনো বীর বা প্রাণী উনার সামঞ্জস্যতা করার ক্ষমতা রাখে?

গন্ধেনাপি হি সংগ্রামে তস্য ক্রুদ্ধস্য শত্রবঃ।
বিসংজ্ঞা হতভূযিষ্টা বেপন্তি চ পতন্তি চ।।২৫
অনুবাদ:- সংগ্রামে ভগবান শঙ্কর ক্রোধী হলে পরে উনার গন্ধে শত্রু বেহুঁশ হয়ে কাঁপতে থাকে এবং আধমরা হয়ে ভূমিতে পতিত হয়।

তস্মৈ নমস্তু কুর্বন্তো দেবাস্তিষ্টন্তি বৈ দিবি।
যেচান্যে মানবালোকে তে চ স্বর্গজিতো নরাঃ।।২৬
অনুবাদ:- উনাকে নমস্কারকারী দেবতা সদা স্বর্গলোকে নিবাস করে থাকেন। দ্বিতীয়ত যে মানব ইহলোকে উনাকে নমস্কার করেন, সেও স্বর্গলোকে বিজয় প্রাপ্তি হন।

যেভক্তা বরদং দেবং শিবং রুদ্রমুমাপতিম।
অনন্যভাবেন সদা সর্বেশং সমুপাসতে।।২৭
ইহলোকে সুখং প্রাপ্যতে যান্তি পরমাং গতিম্।
অনুবাদ:- যে ভক্ত মনুষ্য সদা অনন্য ভাবরূপে বরদায়ক ভগবান কল্যাণ স্বরূপ, সর্বেশ্বর উমানাথ ভগবান রুদ্রের উপাসনা করেন, সেও ইহলোকে সুখ ভোগ করে অন্তিমে পরমগতি প্রাপ্ত হন।

নমস্কুরুষ্ব কৌন্তেয় তস্মৈ শান্তায় বৈ সদা।২৮
রুদ্রায় শিতিকণ্ঠায় কনিষ্টায় সুবঞ্চসে।
কপর্দিনে করালায় হর্যক্ষবরদায় চ।।২৯
অনুবাদ:- কুন্তীনন্দন! অতঃপর তুমিও সেই শান্তস্বরূপ ভগবান শিবকে সর্বদা প্রণাম করিও। যিনি রুদ্র, নীলকন্ঠ, কনিষ্ঠ, সুক্ষ্ম ও দীপ্তিময় উত্তম তেজস্বী সম্পন্ন, জটাজুটধারী, বিক্রালস্বরূপ, পিঙ্গল নেত্রধারী তথা কুবেরকে বর প্রদানকারী সেই ভগবান শিবকে নমস্কার করি।

সুধী সনাতনী, তাহলে দেখুন, অর্জুন ৫ম ও ৬ষ্ঠ শ্লোকের মধ্যে বেদব্যাসকে বলছেন যে, ত্রিশূলধারী সেই তেজস্বী পুরুষ তাঁর (অর্জুনের) শত্রু সংহার করছে এবং অর্জুন উপলক্ষ্য স্বরূপ উনার পিছনে পিছনে চলেছিলেন মাত্র। এছাড়া মহর্ষি বেদব্যাস সেই দিব্য পুরুষের নাম ও বর্ণনা করার সময় ২২তম ও ২৩তম শ্লোকের মধ্যে অর্জুনকে বলছেন যে, মহাদেব ছাড়া দ্বিতীয় কেউ কৌরব সৈন্যদলের ধ্বংস করতে পারত না বা সম্ভবপর হতো না।

মহাভারত রচয়িতা মহর্ষি বেদব্যাস স্বয়ং নিজমুখের কথায় এবং শত্রু সংহারকারী অর্জুনের কথায় এটা প্রমাণিত হয় যে, দ্বাপরযুগের ও কলিযুগের সন্ধিক্ষণে যে ধর্ম যুদ্ধ হয়েছে তা পূর্বেই সিদ্ধান্ত হয়েছিল কৈলাসধামে। অধর্ম্মের বিনাশ করার জন্য পরমাত্মা পরমব্রহ্ম পরমেশ্বর ভগবান মহাদেব নর ও নারায়ণ ঋষির অবতার তথা কৃষ্ণ ও অর্জুনকে শুধুমাত্র উপলক্ষ্য করে রেখেছিলেন।

মূলত ধর্ম স্থাপনা, অধার্মিকের বিনাশ, সৃষ্টির সৃজনশীলতা, দেবত্বের স্বাধীনতা, অংশ অবতারগণের উপস্থিতি প্রখ্যাত করণ, স্বয়ং পরমাত্মা পরমব্রহ্ম পরমেশ্বর ভগবান মহাদেবের অনুগত সকল দেব-দেবী ও নিজ অঙ্গ হইতে সৃষ্ট বিষ্ণু ও ব্রহ্মার প্রতি আদেশকৃত প্রজাসৃষ্টি ও ভূলোকের পালনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কার্য চলিয়মান রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলো, তাই তিনি দ্বাপরযুগের বীর বীর মহাযোদ্ধা যাঁরা অন্যান্য সকল দেবতাদের দ্বারা অদম্য, এমনকী স্বয়ং মহাদেব হইতে সৃষ্ট বিষ্ণু ও ব্রহ্মার দ্বারা অদম্য ও অবদ্য তাঁদের বিনাশ দায়িত্ব নিজ হাতে নিয়েছেন।

কিন্তু, সেই কৃতিত্ব ও বাহবা নিজে গ্রহণ করেননি। সেই কৃতিত্ব ও বাহবা তুলে দিয়েছেন নিজের সর্বশ্রেষ্ঠ ভক্ত বিষ্ণুর অংশ অবতার শ্রীকৃষ্ণনের হাতে এবং নরঋষির অবতার আরেক ভক্ত অর্জুনের হাতে। কেননা, ঈশ্বর কখনও উপাধিপ্রাপ্ত হন না কিন্তু উপাধ্যক্ষতা হন। কেননা তিনি যে, পরমাত্মা পরমব্রহ্ম পরমেশ্বর ভগবান, দেবতাদেরও দেবতা ঈশ্বরেরও ঈশ্বর মহাদেব।

তাহলে প্রিয় সনাতনী সুধী, ইতিহাস গ্রন্থ তথা মহাভারত গ্রন্থের মধ্যে হতে আমরা জানতে পারি যে, ধর্মক্ষেত্র ও কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের ময়দানে উপলক্ষ্য ছিল কৃষ্ণ ও অর্জুন কিন্তু এই যুদ্ধের মূল ঐশ্বর্য শুধুমাত্র মহাদেব। যদিও প্রভু মহাদেব এর কৃতিত্ব নেন নি, কিন্তু মহর্ষি কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন বেদব্যাস তা তুলে ধরতে কিঞ্চিৎ পরিমাণ অবহেলা করেননি। এমনকী আজ আমরা যা জানতে পারলাম তা উনারই অবদান।

এতে এটাও প্রমাণিত হয় যে, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সময় কৃষ্ণ অর্জুনকে যে ভগবৎ তত্ত্ব বলেছিলেন, যে জ্ঞান পাঠ করিয়েছিলেন, সেই জ্ঞান ও ভগবৎ স্বয়ং পরমাত্মা পরমব্রহ্ম পরমেশ্বর ভগবান মহাদেব আর কেউই নয়।

পরমাত্মা পরমব্রহ্ম পরমেশ্বর ভগবান মহাদেব সবার মঙ্গল করুক, সবাই উনার কৃপালাভ করুক এবং অনন্ত কোটি ব্রহ্মাণ্ডের সর্বদা রক্ষা সুলভ উদীয়মান থাকুক এই ভিক্ষা পরমেশ্বর ভগবান মহাদেবের কাছে করি।

                                    হর হর মহাদেব
                             সর্বশাস্ত্রাণাং শিবমদ্বৈতম্
Share This Article :

TAMBAHKAN KOMENTAR

7599550894000336510