BLANTERVIO103

শিব এবং দূর্গা/কালী কি শ্রী কৃষ্ণের দাস দাসী? যুক্তি ও শাস্ত্রের মাধ্যমে ভন্ড কৈষ্ণব ইসকনের মতাদর্শ খন্ডন ।

শিব এবং দূর্গা/কালী কি শ্রী কৃষ্ণের দাস দাসী?  যুক্তি ও শাস্ত্রের  মাধ্যমে ভন্ড কৈষ্ণব ইসকনের মতাদর্শ খন্ডন ।
Monday, February 10, 2020


প্রথমেই বলে রাখি, বিভিন্ন পুরাণ সমূহে কিছু অযৌক্তিক কথা থাকলেও এই  গ্রন্থ গুলো স্বিকার করে হরহরি অভেদ। অর্থাৎ শিব বিষ্ণুর মাঝে পার্থক্য  নেই। কিন্তু বর্তমান যুব সমাজ ইসকনের কল্যানে শিব বিষ্ণুকে দেবতা থেকেও  নিচু স্তরে নামিয়ে দিয়েছে। দূর্গা বা পার্বতীকে কৃষ্ণের দাসী বলতেও  দ্বিধাবোধ করেনা। যাইহোক, এবার প্রথমেই শিব নিয়ে শাস্ত্রের দিকে নজর দিব।
শিব কে ? শিবের ক্রমবিকাশ কিভাবে ?
শিবকে মূলত সংহিতা অংশে পাওয়া যায়না। কিন্তু শিবের আগমন সংহিতা থেকেই  এসেছে। ‘বৈদিক রুদ্র ভাবনা থেকেই শিবের আগমন।’ অন্যভাবে বলা যায় যে বৈদিক  রুদ্রই শিবেতে মিশেছেন। প্রকৃতির ধ্বংসাত্মক মূর্তিকে ঋগ্বেদে রুদ্র বলা  হয়েছে। আকাশের বিদ্যুৎ তাঁর হাতের বাণ, ধ্বংসাত্মক মরুতেরা তাঁর পুত্র  (মরুৎদের তাই ঋক্ সংহিতায় ‘রুদ্রিয়াসঃ’ বলা হয়েছে। ঋ.সং. ১/৩৮/৭; ১/৬৪/২;  ১/১১৪/৬; ২/৩৪/১০ ইত্যাদি মন্ত্র দ্রষ্টব্য।)
ঋগ্বেদের পর  যজুর্বেদের শতরুদ্রীয় নামক অংশে (যেখানে রুদ্রের শতনাম কীর্তিত আছে) তাঁর  চরিত্রের প্রভূত বিকাশ দেখতে পাওয়া যায়। এই নামগুলির মধ্যে কয়েকটি তাঁর  উগ্র রূপ ব্যঞ্জনা করে, কয়েকটি আবার তাঁর মঙ্গলময় সত্তার দ্যোতক। এই দুই  রূপ তাঁর ঘোর ও শিব বা শান্ত তনু।
 অথর্ববেদের যুগ বা তার আগে থেকেই  রুদ্র শিবের সঙ্গে মহাকাল সংক্রান্ত একটা ধারা মিশতে থাকে বলে বেদজ্ঞ  পণ্ডিতেরা মনে করেন। রুদ্রকে সৃষ্টি ও সংহারের দেবতা বলা হয়েছে। অথর্ববেদের  কালসূক্তে (উনবিংশ কাণ্ডের ষষ্ঠ অনুবাকের অষ্টম ও নবম সূক্ত) আমরা কালের  স্রষ্টা রূপের পরিচয় পাই। কালেই সব কিছু উৎপন্ন হয়, আবার কালেই সব বিলীন  হয়।
সংহিতার যুগ অর্থাৎ ঋগ্বেদ-যজুর্বেদ-অথর্ববেদ হয়ে রুদ্রের এই  ক্রমবিবর্তিত ধারায় ব্রাহ্মণ-আরণ্যক-উপনিষদের যুগে এসে রুদ্রের অন্যতম নাম  মহাদেব হিসেবে বৈদিক দেবগণের মধ্যে হয়তো তাঁর প্রধানতম স্থান সম্বন্ধে  ইঙ্গিত প্রদান করে। যেমন, শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের চতুর্থ অধ্যায়ের দশম শ্লোকে  তাঁকে মহেশ্বর নামে অভিহিত করে বলা হয়েছে–
তিনি প্রকৃতি রূপ মায়ার অধীশ্বর এবং এই বিশ্বভুবন তাঁরই বিভিন্ন রূপ বা অবয়বের দ্বারা পরিব্যাপ্ত–
 প্রকৃতিকে মায়া বলে এবং মহেশ্বরকে মায়াধীশ বলে জানবে।
 এই বিশ্বচরাচর মহেশ্বরের দেহ। (শ্বেতাশ্বতর-৪/১০)
 হে রুদ্র, তুমি মৃত্যুঞ্জয়। যে জন্মাদি মৃত্যুভয়ে ভীত সেই তোমার শরণ নেয়। (শ্বেতশ্বতর-৪/২১)
তাহলে দেখা যাচ্ছে পৌরাণিক যুগ আসার পূর্ব থেকেই শিবের পূজা বা স্তুতি করা  হয়েছে। বৈদিক শাস্ত্র অনুসারে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব একই সত্ত্বা।  পরমব্রহ্ম যখন সৃষ্টি করেন তখন তিনি ব্রহ্মা। যখন পালন করেন তখন বিষ্ণু।  যখন ধ্বংস করেন তখন রুদ্র। অর্থাৎ সনাতন ধর্মের সর্বোচ্চ ঈশ্বর  শিব/বিষ্ণু/ব্রহ্মা।
বিষয়টা একটু ক্লিয়ার করা দরকার; ধরুন, আপনি  অনার্স পড়ছেন। সেই সাথে একটি টিউশন পড়ান। এখানে যখন আপনি টিউশন করাচ্ছেন  তখন আপনার স্টুডেন্টের কাছে আপনি টিচার। আবার যখন আপনি অনার্স পড়ছেন, তখন  আপনি নিজেই স্টুডেন্ট। একই সত্ত্বার দুটো পরিচয়।
এই শিবকে শ্রী কৃষ্ণ এবং শ্রী রাম চন্দ্রও পূজা করেছিলেন। চলুন শাস্ত্রে নজর দেই।
 মহাভারতের অনুশাসন পর্বের ১৪ নং দেখা যায় শ্রীকৃষ্ণ সহস্র বর্ষ পর্যন্ত  পরমেশ্বর মহাদেবের ধ্যান করেন। এবং পুত্রলাভের আশায় সেই দেবাদিদেবের  আরাধনায় নিযুক্ত হন।
“কৃষ্ণ সান্দীপনির আশ্রমে গমন করে তাঁর নিকট  হতে শিবমন্ত্রে দীক্ষা গ্রহন করেন। শ্রীকৃষ্ণ অল্পকালের মধ্যেই শিবমন্ত্র  প্রভাবে সর্ব বিদ্যা আয়ত্ব করেন।”(জ্ঞান সংহিতা)।
 লঙ্কা থেকে ফেরার সময় শ্রীরামচন্দ্র মাতা সীতাকে বলেন,
 “এই স্থানে সেই পরমেশ্বর দেবাদিদেব আমার উপর তার আশির্বাদ প্রদান করেছিলো।” (বাল্মিকী রামায়নঃ যুদ্ধ কান্ড ১২৩/১৯)
এবার আসি মা দূর্গাকে নিয়ে, দূর্গার ধারণা আসে ঋগ্বেদের দেবী সূক্তম থেকে।
 “আমি দুষ্টের দমনকারী এবং পৃথিবীর আদি সমস্ত লোকের সাথে বাপ্য। দিন রাত্রি  উভয়কেই আমি ধারণ করি। সমস্ত ঐশ্বর্যকে ধারণ করি। আমি যজ্ঞ দ্বারা উপাস্য।  সব থেকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞানবতী। আমার দ্বারা অনুমোদিত তিনি ভোজন করেন, প্রাণ  ধারণ করেন। আমি ব্রাহ্মন, বেদের হিংসাত্মক শত্রুবর্গকে নাশের জন্য দুষ্টের  রোদনকারী ধেনুকে বিস্তার করি। আমি সূর্যকে উৎপন্ন করি৷ জলের প্রতিটি  পরমানুতে আমার নিবাস। আমিই সমস্ত ভূবন নির্মান করি।।
 (ঋগ্বেদঃ ১০/১২৫/১-৮)
 একই ভাবে মা কালীর ধারণাও এসেছে ঋগ্বেদের রাত্রি সুক্তম থেকে।
 “আগত রাত্রী দেবী পালনকারী নক্ষত্রের সাথে নিজেকে বিশেষ রূপে দর্শন করান। সমস্ত শোভাকে নিজের মধ্যে ধারণ করেন। (ঋগ্বেদঃ ১০/১২৭/১)
 এরপর মার্কেণ্ডেয় পুরাণ সহ বিভিন্ন পুরাণে ইনিই পরমেশ্বরী।
 শ্রী শ্রী চণ্ডীতে ইনিই জগতের কারণ।
 ইনিই সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয়।
 এছাড়া ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ অনুসারে শ্রী কৃষ্ণই সর্বপ্রথম দেবী দূর্গার পূজা করেছিলেন।
 (ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণঃ প্রকৃতি খণ্ড/৫৭/২৯)
 এছাড়া বৈষ্ণবদের প্রধান শাস্ত্র ভাগবতে বলা হয়েছে, ঈশ্বর সাধণার তিন রাস্তা। বৈদিক, তান্ত্রিক, মিশ্র। (১১/২৭/৭)।
 এখন আপনি মিশ্র মতে সাধণা করবেন আর তন্ত্রকে ছুরে ফেলে দিবেন, সেটা কিভাবে হয় ?
 তন্ত্রের যত শাস্ত্র আছে সকল শাস্ত্রে মায়ের বন্দনা করা হয়েছে।
অধিকাংশ ইস্কনীরা আর তথাকথিত বৈষ্ণব সমাজের কিছু লোকেরা বলে থাকে শিব  কৃষ্ণের দাস।মা দূর্গা,শিব নাকি কৃষ্ণের দাস-দাসী। আসুন যুক্তি ও শাস্ত্রের  মাধ্যমে তাদের মতাদর্শ খন্ডন করি।
একটা ছোট্ট উদাহরণ দেই,
 আমি রুদ্র।আমার বাবা-মার নিকট আমি তার সন্তান।আমার বোনের কাছে আমি তার  ভাই।আমার মামার নিকট আমি তার ভাগিনা।আমার দিদিমার নিকট আমি তার নাতি।ভালো  করে করে লক্ষ করুন তো এক আমিই এক এক জনের নিকট এক এক নামে সম্বোধিত  হচ্ছি।অথচ মূলে আমি একজনই।তদ্রুপ পরম ব্রহ্ম একজনই।তিনি একাধারে নির্গুন ও  সগুনও।তার সগুন বিভিন্ন শক্তিকে আমরা বিভিন্ন নামে অভিহিত করি।মূলে তিনি এক  সত্ত্বাই।
জগৎগুরু আদি শঙ্করাচার্য তার লিখা “মনীষাপঞ্চকম” গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন
 “Shivaya Vishnu roopaya , shivarupaya Vishnuve , shivashca hirdhayagam Vishnu , Vishnuscha hridayagam shive “
Shiva is in the form of Vishnu, as Vishnu is in the form of Shiva .  Shiva is in the heart of Vishnu as Vishnu is in the heart of Shiva. ONE  CANNOT be without the OTHER. They complete each other's existence and  that of Universe too.
 এবার আসুন বৈষ্ণব শাস্ত্রে দৃষ্টিপাত করি দেখে সেখানে কি বলে,
 √√ মহাদেবের মন্দিরে গিয়ে মহাপ্রভু নিজেই পূজা দিয়েছেন --
 মহেশ দেখিয়া প্রভুর আবেশ শরীর ।
 টলমল করে প্রভু নাহি রহে স্থির ।।
 নিজহাতে বিল্বদল তুলি প্রভু মোর ।
 অঞ্জলি দিলেন শিবে প্রেমেতে বিভোর ।। ( চৈতন্য ভাগবত ) ।
 √√বৈষ্ণবদের শ্রেষ্ঠ শাস্ত্র ভাগবতে আছে --- ব্রহ্মা , বিষ্ণু আর মহাদেব এক । ( ১২/৫/১; ১২/১০/২২; ১০/১৪/১৯; ১০/২/২৮ ;৮/৭/২৩ ) ।
 √√বিষ্ণু পুরাণে আছে --- ব্রহ্মা , বিষ্ণু আর শিব এক । ( ১/২/৬৬ ) ।
 √√বরাহ পুরাণে আছে --- যারা ব্রহ্মা , বিষ্ণু আর শিব কে আলাদা ভাবে তারা পাপী , তারা নরকে গমন করবে । ( ৭০/৪০ ) ।
 √√পদ্ম পুরাণে আছে --- বিষ্ণু ও শিব কে যারা এক দেখে তারাই প্রকৃত বৈষ্ণব । ( ২য় অধ্যায় ) ।
 √√শিব পুরাণে আছে ---
 বিষ্ণু ভক্ত শিব ভক্ত হয় সেই জন ।
 প্রকৃত বৈষ্ণব সেই শাস্ত্রের বচন।
তাই ইসকন প্রভুদের নিকট আবেদন,
শিবকে কৃষ্ণের দাস আর দূর্গা/কালীকে কৃষ্ণের দাসী ভাবা থেকে বিরত থাকুন। 🙏
Share This Article :

TAMBAHKAN KOMENTAR

7599550894000336510