BLANTERVIO103

যোগ ও যোগী কৃষ্ণ

যোগ ও যোগী কৃষ্ণ
Tuesday, February 11, 2020
অনেক হিন্দু ধর্মের মতালম্বী কে বলতে শুনি শুধু পুরুষ,ভগবান,শ্রীকৃষ্ণ এর আরাধনা বা স্তুতি করলেই মানবজীবন তথা ইহকাল ও পরকাল সার্থক।আদ্যাশক্তি মহামায়ার(দূর্গা,কালী ও অন্যান্য দেবীর) পূজা বা আরাধনা করার কোন প্রয়োজন নেই।অনেকে মা দূর্গা,মা কালীকে শ্রীকৃষ্ণের দাসী জ্ঞান করেন।অনেকে এও বলেন যে ৩২ অক্ষর হরিনাম বা কৃষ্ণ নাম বা অন্য কোন নাম জপ করলেই ইহ এবং পরকালের তরণী পার হওয়া যায়।
আর কিছু গুরু কে দেখা যায় পাঁচ বছরের বালক কে দীক্ষা দিচ্ছেন,তিলক পড়াচ্ছেন,জপের মালা দিচ্ছেন।ইসকন মতালম্বীদের দেখি যত্রতত্র যেকোন অবস্থায় কৃষ্ণ নাম জপ করছেন।যেখানে সেখানে মহিলাদের নিয়ে সংকীর্তন করছেন।শুচি-অশুচির কথা তুললে তাঁরা ক্ষেপে যান।বলেন যেকোন জায়গায় মহামন্ত্র জপ করা যায়।তাঁদের উদ্দেশ্যে আজকের এই আলোচনা।।

সৃস্টির আদিকাল থেকে পুরুষ-এবং প্রকৃতির মিলন ছাড়া কিছুই সম্ভবপর হয়নি।এই প্রকৃতির শক্তিকেই আমরা আদ্যাশক্তি বা মহামায়ার কৃপা বলছি। আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য হচ্ছে ঈশ্বর লাভ।কিন্তু এই ঈশ্বর লাভ খুব সস্তা নয় যা আমরা বুঝিয়ে থাকি।পারমার্থিক পথে যেতে হলে আপনাকে সংসারের সমস্ত বন্ধন ত্যাগ করতে হবে।এবং জীবাত্মা ও পরমাত্মার সাথে "যোগের" মাধ্যমে সম্মিলন ছাড়া এই বন্ধন ত্যাগ সম্ভবপর নয়।আর এই বন্ধন কে অনেকেই "ভব রোগ" হিসেবে আখ্যায়িত করে গেছেন।গীতায় শ্রীকৃষ্ণ ও বারবার "যোগযুক্ত" হবার কথা বলে গেছেন।যোগযুক্ত না হলে "ব্রহ্ম " এর সাথে সম্মিলন তথা জীবাত্মা-পরমাত্মা-র সংযোগ তথা ইহবন্ধন থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব নয়।হিন্দু শাস্ত্র অন্তত অনেকাংশে তাই বলে।

এখন গুরুদেব বা প্রভূরা যখন জপ মালা দেন তখন তারা বলেন পারমার্থিক পথে উন্নতির জন্য এই জপ মালা।এই জপ মালা অনেকে বাজারের থলি হাতে, অনেকে গাড়িতে বসে,অনেকে পথের মধ্যে হেঁটে, অনেকে খেতে বসে জপ করতে থাকেন।উদ্দেশ্য যাতে ইহবন্ধন থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।কিন্তু জপমালার মাধ্যমে কিভাবে মুক্তি পাবো তা তাঁরা বলেন না।

আসলে মানুষের মধ্যে যে সর্পাকৃতি "কুলকুন্ডলীনি" শক্তি আছে তার উন্মেষ ঘটিয়ে যদি জীবাত্মা-পরমাত্মার সাথে সংযোগ তথা "ব্রহ্মের" সাথে সংযোগ ঘটানো না যায় তবে জীবের মুক্তি মেলেনা,এবং সে বন্ধন হতে মুক্তি পায়না।এখন এই "কুলকুন্ডলীনি " শক্তির উন্মেষের জন্য দুটি বিষয়ের প্রয়োজন।

১.যোগযুক্ত হওয়া ২.মহামায়ার কৃপা।।

এবার আসি কেন জপমালা তে ১০৮ তথা ১৮ সংখ্যাটি ব্যবহার করা হলো।শুধু জপমালা নয় বরং হিন্দুদের ধর্মীয় শাস্ত্রে ১০৮ বা ১৮ সংখ্যাটির অশেষ গুরুত্ব।তার কিছু উল্লেখ করলাম।

১.শ্রীমদ্ভাগবত গীতায় অধ্যায় সংখ্যা--১৮
২.শ্রীমদ্ভাগবত এর শ্লোক সংখ্যা--১৮০০০
৩.কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের ব্যাপ্তি কাল--১৮ দিন
৪.মহাপুরান এর সংখ্যা--১৮ টি
৫.উপপুরান এর সংখ্যা--১৮ টি
৬.মহাভারতের পর্ব সংখ্যা--১৮ অধ্যায়
৭.কুরুক্ষেত্রে উভয় পক্ষে সৈন্যসংখ্যা ১৮ অক্ষৌহিনী
৯.দূর্গাপূজায় ব্যবহার হয় ১০৮ টি পদ্মফুল
১০.দেবীর গলায় পড়াতে হয় ১০৮ টি বেলপাতার মালা
১১.নারায়ন পূজায় তুলসী লাগে ১০৮ টি
১২.যে কোন যজ্ঞে আহূতী দিতে হয় ১০৮ টি
১৩.জপের মালায় "গুটি" র সংখ্যা ১০৮ টি
১৪.সংস্কৃত বর্নমালায় ৫৪ টি বর্ন রয়েছে।যার প্রতিটিতে "পুরুষ+প্রকৃতি" বিদ্যমান অর্থাৎ ৫৪*২=১০৮।
১৫.দিবামান কে "যাম" বা "প্রহর"বিবেচনা করে শাস্ত্রীয় কাজ করা হয়।এক প্রহর=১৮০ মিনিট।
১৬.এক " মূহুর্ত" সময় কে অতীত(৩৬)+বর্তমান(৩৬)+ভবিষ্যত(৩৬) দিয়ে গননা করা হয়, অর্থাৎ ৩৬+৩৬+৩৬=১০৮।
১৭.শ্রীকৃষ্ণের নাম ১০৮ টি
১৮.পঞ্চদেবতা(গনেশ,বিষ্ণু,শিব,দূর্গা,আদিত্য) এর সংকীর্তন এ নামের সংখ্যা ১০৮ টি।

এই এতোকিছুর পিছনে কারন হচ্ছে ১৮ সংখ্যাটি "যোগ" সংখ্যা।যোগযুক্ত না হলেব্রহ্মের সাথে সংযোগ সম্ভব নয় এবং পারমার্থিক উন্নতি সম্ভব নয়।আর ১৮ তথা ১(পুরুষ)+৮(প্রকৃতি) সংখ্যা দুটি কে যুক্ত করে রেখেছে ১+০+৮ বা "শূন্য" তথা শালগ্রাম তথা নারায়ন।তাই ১ এবং ৮ এর মাঝখানে যে "০ " রয়েছে তা আসলে "পূর্ন ব্রহ্মের" স্বরুপ।তাই নারায়ন শীলা ব্যতিত কোন পূজাই হয়না।এবং পবিত্রতা ছাড়া আপনি নারায়ন শীলা ব্যবহার করতে পারবেন না।ঠিক এই কারনে শুদ্ধ,পবিত্র না হয়ে জপমালা ও জপ করা যায় না।কারন জপ মালায় রয়েছে সর্পাকৃতি "কুলকুন্ডলীনি" শক্তির আধার।যাকে যুক্ত করে রয়েছে ব্রহ্ম তথা নারায়ন।মহামায়ার কৃপা ছাড়া কুলকুন্ডলীনি শক্তিকে জাগ্রত করা সম্ভব নয়।তাই মহামায়া কে যারা কারো দাসী হিসেবে অভিহিত করেন তারা বোকার স্বর্গে বসবাস করেন।কারন মহামায়ার কৃপা ব্যতীত তাঁরা তাদের আরাধ্যকে লাভ করতে পারবেন না কখনোই।

মহামায়ার কৃপা ছাড়া আপনি এই কুলকুন্ডলীনি শক্তিকে জাগাতে পারবেন না।মহামায়ার কৃপা হলে মায়ামুক্ত হয়ে মানুষ "যোগযুক্ত" হতে পারে এবং পরমাত্মা তথা ব্রহ্মের সাথে সংযোগ ঘটাতে পারে।তাই যারা মহামায়া তথা মা দূর্গা,বা কালীকে দাসী বলেন তারা নিকৃষ্ট শ্রেণীর বোকা।কারন আদ্যাশক্তির কৃপা বিনা আরাধ্যকে অর্জন সম্ভব নয়।

কুলকুন্ডলীনিচক্র(মূলাধার,স্বাধিষ্ঠান,মনিপুর,অনাহত,বিশুদ্ধ,আজ্ঞা) এবং ১২ টি অপ্রধান চক্রের মাধ্যমেই মানুষ ব্রহ্ম বা পরমাত্মার সাথে মিলিত হতে পারে।এখানে ও ৬+১২=১৮ বা "যোগ"।।
মহাপ্রভূ শ্রীচৈতন্য ও তঁার " জগন্নাথ অষ্টক" এ এই কুলকুন্ডলীনি শক্তি তথা মহামায়ার মায়া শক্তিকে সমর্থন করে গেছেন।

কাজেই যারা সর্বক্ষন জপমালা যত্রতত্র জপ করে থাকেন এবং যেসব গুরুরা শিষ্যমাত্রই জপমালা দিয়ে থাকেন তারা আসলে অজ্ঞানবশত দেন বা জ্ঞানপাপী।ঠিক ততটাই অজ্ঞান যারা বলেন কৃষ্ণ নাম,হরি নাম,বা আরাধ্যের নাম যত্রতত্র পাঠ করলে বা জপলে আপনি মুক্তিলাভ করবেন।ব্যাপার টা এতো সহজ নয়।

আমাদের সবার মধ্যে মহামায়ার শক্তির উম্মীলন ঘটুক।

Prepared By
সুকান্ত চক্রবর্তী
Share This Article :

TAMBAHKAN KOMENTAR

7599550894000336510