BLANTERVIO103

ইস্কন কেন বৈষ্ণব না

ইস্কন কেন বৈষ্ণব না
Tuesday, June 2, 2020

#গৌড়ীয়_মঠ_ও_ইস্কন_বৈষ্ণব_বলে_গণ্য_না_করার_কারণ_সমূহ_:-

কেউ চাইলে তাদের বৈষ্ণব মানতেই পারেন,তাতে আমার কোনো ক্ষতি বৃদ্ধি নেই কিন্তু অনুগ্রহ করে আমায় মানতে বলবেন না।

চার মঠ-দশ সম্প্রদায় আমার চোখে বৈষ্ণব।
কারণ নিম্নরূপ :-

ভারতীয় সনাতন বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের সম্পর্কে তাকে ও অন্যান্য সকলকে একটু শাস্ত্রীয় দৃষ্টিতে জানাতে চাই।

যথা মহাকালসংহিতায় বলা আছে :-

ন শাস্ত্রমালোক্য বদেন্নাচাররেন্ন জপেদপি। ন পশ্যেন্নোপদিষ্টশ্চ ন কুর্য্যান্নৈব সাধয়েৎ। । গুরুপদেশতো লব্ধে জপন্যাসার্চনাদিকম্। পশ্চাত্তৎ সাধয়েৎ সর্বং সদা তদ্ভবভাবিনঃ। ।

অর্থাৎ শাস্ত্রদেখে কিছু বলা বা আচরণ করা বা জপ করা উচিৎ নয় যতক্ষণ না সেটি গুরু দ্বারা উপদিষ্ট হয়। গুরুর উপদেশানুসারেই জপ ন্যাস অর্চনাদি সাধন ইষ্টগতপ্রাণ হয়ে কর্তব্য।

পদ্মপুরাণ বলছে~
সেবা সাধকরূপেণ সিদ্ধরূপেণ চাত্র হি। তদ্ভাবলিপ্সুনা কার্য্যা ব্রজলোকানুসারতঃ। । সম্প্রদায়বিহীনো যে মন্ত্রাস্তে নিস্ফলা মতাঃ। সাধনৌঘৈর্নসিদ্ধ্যন্তি কোটিকল্পশতৈরপি। ।
অতঃ কলৌ ভবিষ্যন্তি চত্বারঃ সম্প্রদায়িণঃ।
শ্রী-ব্রহ্মা-রুদ্র-সনকাঃ বৈষ্ণবাঃ ক্ষিতিপাবনাঃ। ।

অর্থাৎ ব্রজলোকের সিদ্ধনিয়মানুযায়ীই ভগবদ্ভক্ত কেবল সাধন কর্তব্য। এইরূপ গোলোকের নিয়ম সিদ্ধ সম্প্রদায় বিহীন মন্ত্র শত-কোটি-কল্পকালেও সিদ্ধ হবেনা। কলিকালে এইরকম চারটি বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের উদ্ভব হবে পরমেশ্বরের সেবার জন্য ভগবতী লক্ষ্মীর থেকে শ্রী সম্প্রদায়, ব্রহ্মার সম্প্রদায়, রুদ্রের সম্প্রদায়, সনকাদি চতুঃসনের সম্প্রদায়।
চার সম্প্রদায়ের চারজন আচার্য্য হবেন
যথা~
রামানুজং শ্রীঃ স্বীচক্রে মাধ্বাচার্য্যং চতুর্মুখম্। শ্রীবিষ্ণুস্বামিণো রুদ্রো নিম্বাদিত্যো চতুঃসনঃ। ।
অর্থাৎ শ্রী সম্প্রদায়ে শেষাবতার রামানুজ (বিশিষ্টাদ্বৈতবাদী), ব্রহ্মার সম্প্রদায়ে বায়ুর অবতার মাধবাচার্য্য(শুদ্ধদ্বৈতবাদী), রুদ্রের সম্প্রদায়ে বিষ্ণুস্বামী এবং চতুঃসন সম্প্রদায়ে নারদাবতার নিম্বার্কাচার্য্য চার সম্প্রদায়ের আচার্য্য হবেন।
এই চার মূল সম্প্রদায় বা মঠের বাইরে ভগবান সদাশিব দশনামী শাস্ত্রীয় বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের কথাও বলেছেন।
যথা শক্তিসঙ্গমতন্ত্রে~ বৈখানসো ভবেদাদৌ শ্রীরাধাবল্লভস্তথা। গোকুলেশো মহেশানি তথা তথা বৃন্দাবনী ভবেৎ। । পাঞ্চরাত্রো পঞ্চমঃ স্যাৎ ষষ্ঠঃ শ্রীবীরবৈষ্ণবঃ। রামানন্দী হরিব্যাসী নিম্বার্কাশ্চ মহেশ্বরি ততো ভাগবতো দেবি দশভেদাঃ প্রকীর্তিতাঃ। ।

অর্থাৎ বৈখানস (শ্রীদেবী ভূদেবী বিষ্ণু উপাসক), রাধাবল্লভ(রাধাকৃষ্ণোপাসক), গোকুলেশ (বালগোপালোপাসক), বৃন্দাবনী (সখী ও মঞ্জরী ভাবে রাধাকৃষ্ণোপাসক), পাঞ্চরাত্র (লক্ষ্মীনারায়ণোপাসক), বীরবৈষ্ণব (ভগবান নারায়ণোপাসক), রামানন্দী (রামোপাসক), হরিব্যাসী (শিব শক্তি বিষ্ণু অভেদজ্ঞানী), নিম্বার্ক (রাধাকৃষ্ণোপাসক), ভাগবৎ (ভগবানে সর্বরূপে তদগতচিত্ত মূল নারায়ণোপাসক)।

এর মধ্যে শ্রীসম্প্রদায়ের অন্তর্গত হল~ বৈখানস, পঞ্চরাত্র, বীরবৈষ্ণব।
ব্রহ্মমাধ্ব সম্প্রদায়ান্তর্গত হল গোকুলেশ এবং ভাগবৎ। রুদ্রসম্প্রদায়ান্তর্গত রামানন্দী এবং হরিব্যাসী। চতুঃসনের অন্তর্গত হল রাধাবল্লভ, বৃন্দাবনী, নিম্বার্ক। এই হল চার মঠের দশ সম্প্রদায়। ঠিক এমনই বৈদিক সম্প্রদায়ে চতুরাম্নায়ে দশনামী বৈদিক সন্ন্যাসী (শঙ্করাচার্য্যের পরম্পরা) দৃষ্ট হয়।
এইবার দশনামী বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের শিবোক্ত পরিচয় উল্লেখ করব যথা শক্তিসঙ্গমতন্ত্রে~বৈখানসাদি দীক্ষাদ্যৈর্ভূষিতঃ স্মার্তবৈষ্ণবঃ। বৈষ্ণবাচার নিরতো বিষ্ণুমন্ত্রৈকপারগঃ। অনন্যচেতা শান্তাত্মা বিষ্ণুচিহ্নপরায়ণঃ। ।

অর্থাৎ বৈখানস আগমানুসারে বিষ্ণুর মন্ত্রে দীক্ষিত বৈষ্ণবাচার সম্পন্ন বিষ্ণুগত প্রাণ ও শান্তাত্মা এবং সর্বাঙ্গে বিষ্ণুচিহ্ণ অর্থাৎ তপ্তমুদ্রা দ্বারা শঙ্খচক্রাদি ধারণকারী কেবল বিষ্ণু উপাসক সম্প্রদায় এটি। বর্তমানে তিরুপতি বালাজী মন্দিরের সেবককুলে এইরূপ বৈষ্ণব দৃষ্ট হয়।

শ্রীরাধাবল্লভো দেবি গোকুলেশং শৃণু প্রিয়ে। নানাভরণসম্পন্নো নানাসৌগন্ধভূষিতঃ। । গবাং কুলং প্রীণয়তঃ কলিকৃষ্ণস্য রূপধৃক্। শরীরমর্থং প্রাণাংশ্চ তন্নিবেদনকারকঃ। । অন্তঃ শক্তিপরো দেবি বহির্বৈষ্ণবরূপধৃক্। গন্ধর্বাচার নিরতো লতাবেষ্ঠিত তৎপরঃ। ।

অর্থাৎ গোকুলেশ সম্প্রদায় নানালঙ্কার পরিধান করে, নানাগন্ধদ্রব্য ব্যবহার করে, নিজের শরীর অর্থ সর্বস্ব দিয়েও গো সেবাকারী হয়। এই সম্প্রদায় অন্তরে শাক্ত হয় এবং বাইরে বৈষ্ণবীয় ভাব অবলম্বন করেন। এই সম্প্রদায় লতাবেষ্ঠিত হয় এবং গন্ধর্বাচারে শক্তির উপাসনা করেন। গন্ধর্বাচার শক্তিসাধকদের ত্রিপুরসুন্দরী উপাসনার একটি বামমার্গী তান্ত্রিক আচার। গোপালসুন্দরী নামক গুপ্ত মহামন্ত্রের উপাসনাই করেন এই সাধকগণ। প্রভু নিত্যানন্দ এই সম্প্রদায়ের ভাবাশ্রিত ছিলেন। খড়দহে শ্যামসুন্দরের মন্দিরে তৎপূজিত সিদ্ধ ত্রিপুরসুন্দরী শ্রীযন্ত্র অদ্যপি পূজিত হয়।

অতঃপর সদাশিব গোকুলেশ সম্প্রদায় সম্পর্কে বলেছেন যে~
সম্প্রদায়ো গোকুলেশঃ সর্বসিদ্ধিকরো ভূবি। বিগতাশঃ প্রসন্নাত্মা বিষ্ণুভক্তিপরায়ণঃ। ।

অর্থাৎ গোকুলেশ সর্বাশা পরিত্যাগী প্রসন্নাত্মা উদাসী সন্ন্যাসী সম্প্রদায় বিশেষ। এরা বিষ্ণুভক্তি পরায়ণ এবং অষ্টাক্ষর ও দশাক্ষর মন্ত্রোপাসনা করে থাকেন। মথুরায় এই সম্প্রদায়ের সাধু দেখা যায়।

অতঃপর বৃন্দাবনী~কামিনীসঙ্গচপলো বনক্রীড়াবিনোদধৃক্। সৌগন্ধভূষিততনুঃ স্ত্রীধ্যানৈকপরায়ণঃ। বিষ্ণুস্বারূপ্য তত্বজ্ঞঃ প্রোক্তো বৃন্দাবনী শিবে। ।

অর্থাৎ এই সম্প্রদায় বৃন্দবনে ক্রীড়াবিনোদনকারী কামিনীগণের অর্থাৎ রাধাকৃষ্ণের নিত্যান্তরঙ্গ অষ্টসখী ও মঞ্জরীগণের ন্যায় তদ্ভাব অবলম্বন করে ভজন করে থাকেন।

এনারা বিষ্ণুর স্বারূপ্য জানেন এবং
একো ঈশঃ প্রথমতঃ দ্বিধারূপ বভূব স।
একাস্তি বিষ্ণুমায়য়া পুমানেকো স্বয়ম্বিভোঃ। ।

অর্থাৎ এক বিষ্ণুই মায়ার দ্বারা দুই কৃষ্ণ ও রাধা রূপে লীলা করছেন এইরূপ ভেবে সাধনা করেন।

এরপর মুখ্যতঃ শ্রীসম্প্রদায়ের রামানুজপন্থীদের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে~
পঞ্চরাত্রব্রতং প্রাপ্তাঃ পঞ্চরাত্রাঃ প্রকীর্তিতাঃ। দিনপঞ্চকপর্যন্তং শৈবা নাম ত্রিলোচনাঃ। ।

অর্থাৎ এরা শিবোক্ত পঞ্চরাত্রাগম অনুসারে লক্ষ্মীনায়ারণের উপাসনা করেন। দক্ষিণ ভারতের শ্রীরঙ্গমে এই সাধকদের আধিপত্য দেখা যায়। এরপর বীরবৈষ্ণবের বর্ণনায় সদাশিব বলেছেন
~ কায়েন মনসা বাচা ভজতে বিষ্ণুমেব যঃ।
স বীরবৈষ্ণবঃ প্রোক্তো দেবতান্তরনিন্দকঃ। । চরাচরমিদং বিশ্বং জানন্নারায়ণাত্মকম্।
কচিন্ন দ্বেষ্টি যঃ সোহয়মুত্তমো বীরবৈষ্ণবঃ। ।

অর্থাৎ যারা কায় মন বাক্যে কেবল বিষ্ণুরই ভজনা করেন এবং অন্যদেবতার নিন্দা করেন বা তাদের স্বাতন্ত্রতা স্বীকার করেননা তারাই বীরবৈষ্ণব। এরমধ্যেও যারা সমগ্রজগৎকে নারায়ণাত্মক দেখে এবং কোন দেববিদ্বেষী নয় তারাই উত্তম বীরবৈষ্ণব। দাক্ষিণাত্যে এইরূপ সাধকগোষ্ঠী খুবই প্রসিদ্ধ। তিরুপতি ও বিঠ্ঠল দেবের মন্দিরে এই প্রকার সম্প্রদায় লক্ষ্যনীয়।

এরপর সদাশিব রামানন্দী সম্প্রদায়ের বর্ণনা করেছেন~
হৃদয়াম্ভোজমধ্যস্থে শ্রীরামে পরমাত্মনি।
আনন্দং ভজতে যস্তু রামানন্দী স উচ্যতে। । পাপসংহরণাসক্তো রামভক্তো জিতেন্দ্রিয়ঃ। যমাদিনিয়মৈর্যুক্তো রামকার্য্যপরায়নঃ। ।

অর্থাৎ যিনি হৃদয়ে পরমাত্মা শ্রীরামের দর্শনে আনন্দলাভ করেন এবং পাপীর পাপবিনাশে সক্ষম তথা সংযমী ও রামের কার্য্যে সদাতৎপর সেই হল রামানন্দী উপাসক।

এই সম্প্রদায়ে শিশুরাম ও সীতারাম বা পট্টাভিরামের উপাসনা প্রচলিত। অযোধ্যায় এই উপাসক মন্ডলী দেখা যায়।

ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের সাথে এক সাধুর দেখা হয়েছিল যিনি এই রকম রামলালা বা শিশুরামের উপাসক ছিলেন।
অনন্তশ্রী ওঙ্কারনাথজির পরমগুরুদেব দামোদর দাসজি এই রকম রামানন্দী বৈষ্ণব ছিলেন। এরাই রামাৎ বা রামায়েৎ বৈষ্ণব নামে পরিচিত।

এরপর হরিব্যাসী সম্প্রদায়~
হরিব্যাসী মহেশানি শিবশক্তিস্বরূপধৃক্। নিত্যার্চনক্রমাসক্তঃ স্বতন্ত্রৈকপরায়ণঃ। বাহ্যপূজাদি নিরতোহনন্যভক্ত প্রসন্নধীঃ। ।

অর্থাৎ হরিব্যাসীগণ শিব শক্তি ও বিষ্ণুকে অভেদজ্ঞানে পূজা করেন। নিজেরা বাহ্যত শৈব ও শাক্তের লক্ষণ যথা ত্রিপুন্ড্র রুদ্রাক্ষমালা সিন্দুর ধারন, তন্ত্রমতে মদ্য মাংস মৎস্য ইত্যাদি আমিষ দ্বারা নিত্য বিষ্ণু পূজা করে থাকেন।
এইরূপ এক সম্প্রদায়ের সাধু বঙ্গদেশে প্রাচীন কাল থেকেই ছিলেন। অদ্বৈতকুল তিলক বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী প্রভুর শিষ্য জটাশংকর নীলকন্ঠ কুলদানন্দ ব্রহ্মচারী জী এইরূপ উপাসক ছিলেন।

এরপর নিম্বার্ক বা নিমাৎ বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের বর্ণনা শাস্ত্র দিয়েছে~
আর্যপক্ষান্বিতোঃ স্বচ্ছঃ স্বচ্ছন্দাচার তৎপরঃ। স্বতন্ত্রঃ স্মার্তবিদ্বেষী নিম্বার্কো ভগবান্ হরিঃ। ।

অর্থাৎ নিম্বার্কগণ বেদাচারী তবে স্মার্তমত বিরোধী, ভক্তিই ইহাদের মূলধন। বৃন্দাবনে কাঠিয়া বাবাদের সম্প্রদায় নিম্বার্ক সম্প্রদায়।

শেষ হল ভাগবত~
বিষ্ণুভক্তৈক নিপুণঃ বিজিতাত্মা প্রসন্নধীঃ। স্মার্তগর্বান্বিতো দেবি তদান্যাচার বর্জকঃ। । শৈবদ্বেষী তস্য সঙ্গাৎ পুনঃ স্নানপরায়ণঃ।
কেবলং বিষ্ণুভক্তিজ্ঞঃ প্রোক্তো ভাগবতঃ প্রিয়ে। ।

অর্থাৎ এই সম্প্রদায় চরম স্মার্তাচার পরায়ন অন্য আচার মানেন না।
শৈব বিদ্বেষী এবং শৈব স্পর্শে স্নান করে পুনঃ শুচিতা লাভ করে। কেবল বিষ্ণু ছাড়া কারোর উপাসনা করেনা। এইরূপ বৈষ্ণব দাক্ষিণাত্যের দিকে দেখা যায়। আয়েঙ্গার নামক পদবীধারী বৈষ্ণবরা কিছুটা এইরকম হয়ে থাকে। এরা গন্ডভেরুন্ড নৃসিংহের উপাসনা করেন বলে শ্রুতি। বৈষ্ণবগণের মধ্যে প্রাচীনতম সম্প্রদায় হল রুদ্র সম্প্রদায় শোনা যায় আদিশঙ্করাচার্য্যের কিছু পরে পুরীর মন্দির পুনরায় বৌদ্ধ কবলিত হয়ে যায়। অনেকের মতে আগে খৃষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে পান্ডদেশের পরমবৈষ্ণব রাজা পান্ডু বিজয় তার পরমবৈষ্ণব কুলপুরোহিত দেবেশ্বরের সহায়তায় পুরীর মন্দির বৌদ্ধদের থেকে উদ্ধার করেন এবং সেখানে সেবা পুনঃ প্রতিষ্ঠা করেন। তার নাম অনুসারে রথযাত্রার নাম পাওহান্ডি বিজয় ও সেবকদের নাম হয় পান্ডা ইতি শ্রুতি। এই সময় কুলপুরোহিত দেবেশ্বরের বিষ্ণুর কৃপায় পুত্র হয় দেবতনু। এই দেবতনুই পরবর্তীকালে বৈদিক ত্রিদন্ডসন্ন্যাস প্রবর্তন করেন এবং রুদ্র সম্প্রদায় সৃষ্টি করেন। এরা মূলত বৈখানস ও পাঞ্চরাত্রিক পন্থী। এরপরের বৈষ্ণব সম্প্রদায় হল শ্রী বা রামানুজ পন্থী। এই ঘরানা আদি শঙ্করের পরবর্তীকালে আবির্ভূত হয় দক্ষিণে এক বিশাল ভক্তি আন্দোলনের সূচনা করে। এরাও বৈদিক ত্রিদন্ডী সন্ন্যাসী। এরা অষ্টাক্ষর নারায়ণোপাসক এবং পদ্মাবতী বা মহালক্ষ্মীর। নামের শেষে জিওর কথাটি বসান যার অর্থ নারায়ণের দাস। তারপর ব্রহ্মমাধ্ব সম্প্রদায় আদি জগদগুরু শঙ্করাচার্য্যের পরম্পরার পশ্চিমাম্নায় দ্বারকা শারদা মঠের তীর্থ নামা দশনামী একদন্ডী বৈদিক সন্ন্যাসী পরম্পরার অন্তর্গত এরা। ভগবান বিষ্ণুর সর্বস্বরূপের উপাসনা এনারা করেন। শঙ্করের শিষ্য পদ্মপাদের শিষ্যকুল থেকে এদের গুরুপরম্পরা এসেছে যথা~ পদ্মপাদ→জ্ঞাননিধি তীর্থ→গরূড়বাহন তীর্থ→কৈবল্য তীর্থ→জ্ঞানেশ তীর্থ→পর তীর্থ→ সত্যপ্রজ্ঞ তীর্থ→প্রাজ্ঞ তীর্থ→অচ্যুতপ্রেক্ষ তীর্থ→আনন্দ তীর্থ (মাধ্বাচার্য্য) এইরূপ পরম্পরা এবং তৎপরবর্তীকালে তৎপ্রতিষ্ঠিত একাধীক মঠ এই শুদ্ধ তীর্থ নামা একদন্ডী সন্ন্যাস বজায় রেখেছে। এছাড়া মাধ্বরা প্রচ্ছন্ন শক্তি উপাসক তাদের ভুবনেশ্বরীক্রমে পূর্ণাভিষেক আদির সংস্কার হয়। গুরুপরম্পরা সূত্রে গৌড়ীয় ধারার দুই দিকপাল অদ্বৈতাচার্য্য প্রভু ও নিত্যানন্দ প্রভু এই সম্প্রদায়ের অন্তর্গত। যদিও এখন প্রশ্ন হতে পারে যে তারা তো দশনামীর পুরী সম্প্রদায়ের শিষ্য ছিলেন তাহলে সেই গুরুপরম্পরার সামান্য উল্লেখ না করে পারছিনা। মাধ্বাচার্য্যের পর পদ্মনাভ তীর্থ→নরহরি তীর্থ→অক্ষোভ্য তীর্থ→জয় তীর্থ→জ্ঞানসিন্ধু তীর্থ→ দয়ানিধি তীর্থ→ বিদ্যানিধি তীর্থ→ রাজেন্দ্র তীর্থ→জয়ধর্ম তীর্থ→ পুরুষোত্তম তীর্থ→ব্রাহ্মণ্য তীর্থ→ ব্যাস তীর্থ→লক্ষ্মীপতি পুরী (ইনি ব্যাস তীর্থ স্বামীর থেকে ভজন সাধন দীক্ষাদি প্রাপ্ত হলেও সন্ন্যাস পাননি তাই পরে শঙ্করপন্থী পুরী সম্প্রদায়ের থেকে সন্ন্যাস নেন) লক্ষ্মীপতীর দুই শিষ্য শঙ্করারণ্য পুরী (শ্রীচৈতন্যের গৃহত্যাগী অগ্রজ বিশ্বরূপ) এবং মাধবেন্দ্র পুরী। শঙ্করারণ্য পুরীর ব্যাক্ত অবধূত শিষ্য হলেন প্রভু নিত্যানন্দ এবং মাধবেন্দ্র পুরীর শিষ্য হলেন ব্যাক্তাবধূত শিষ্য ঈশ্বর পুরী জী এবং গুপ্তাবধূত শিষ্য হলেন অদ্বৈতাচার্য্য। পরে এদের থেকে সম্প্রদায় আরো এগিয়েছে। ঈশ্বর পুরীর কাছ থেকে শ্রীমন্মহাপ্রভু দশাক্ষর গোপালমন্ত্রে গয়ায় দীক্ষা পান এটা সর্বজন বিদিত। পরে তিনি কেশব ভারতীর কাছে উচ্চসংস্কার পান এটাও সর্বজন বিদিত। তাহলে মহাপ্রভু ঈশ্বর পুরীর সূত্রে মাধ্ব সম্প্রদায়ের শিষ্য হলেন তবে পরে কেশব ভারতীর সূত্রে তিনি নিম্বার্ক সম্প্রদায়ের অন্তর্গত হয়েছিলেন। মাধ্ব মতে সাথে অদ্বৈতের ও নিত্যানন্দ প্রভুর মতের মিল থাকলেও মহাপ্রভু প্রদত্ত ভজন কিন্তু নিম্বার্ক মতেরই অনুকুল। মাধ্বগণ মূলত নারায়ণোপাসক তাদের কাছে কৃষ্ণ অংশাবতার কিন্তু নিম্বার্ক মতে~রাধয়া সহিতো দেবো মাধবো বৈষ্ণবোত্তমৈঃ। অর্চ্যো বন্দ্যশ্চ ধ্যেয়শ্চ শ্রীনিম্বার্ক পদানুগৈঃ। । অর্থাৎ রাধা ও মাধবের অর্চন বন্দন ধ্যানই নিম্বার্ক পদানুগত জনের কর্তব্য অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণ এখানে পূর্ণব্রহ্ম অংশাবতার নন। আধুনিক কালে যে অভিনত অপসিদ্ধান্তমূলক “ভক্তি” নামের পাশে জ্যোতিষের ডিগ্রি “সিদ্ধান্ত সরস্বতী” বসিয়ে বিমলা প্রসাদ দত্ত স্বয়ং ত্রিদন্ড সন্ন্যাস গ্রহণ করে মাধ্ব সম্প্রদায়ের মত রামানুজের পথ ও নিম্বার্কের ভজন নিয়ে “গৌড়ীয় মঠ” খুলেছেন বা ভক্তি বেদান্ত স্বামী তার শিষ্য যে ইস্কন খুলেছে তা বৈষ্ণবদের কোন মঠ বা সম্প্রদায়ই সম্মতি তো দেয়ইনি বরং এটি তাদের স্বকপোলকল্পিত মনগড়া এটা জানানো দরকার এবং এই কাজের জন্য বিমলা প্রসাদ দত্ত বা ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী নামক ব্যাক্তির দীক্ষাগুরু যিনি নিত্যানন্দাবতার রাধারমণ চরণ দাস বাবাজীরও সন্ন্যাস গুরু গৌরকিশোর দাস বাবাজী তাকে ত্যাগ করে এবং বিতারিত করেন একথা সকলকে জানানো প্রয়োজন। শেষে নিম্বার্ক পরম্পরা সম্পর্কে বলা যে সুদর্শনচক্রাবতার ভগবান নিম্বার্কের পরম্পরা আদি জগদগুরু শঙ্করাচার্য্য প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণাম্নায় শৃঙ্গেরী শারদা পীঠের ভারতী সম্প্রদায়ের অন্তর্গত ছিল। তাদেরও গোপনে শক্তি উপাসনার প্রচলন ছিল। কেশব ভারতী নিম্বার্কের পর ৩০নং মোহন্ত পদে আসীন হয়েছিলেন তা নিম্বার্ক গুরু প্রণালীতেই পাওয়া যায়। এবং চৈতন্য দেবকে এক রাত্রের পরিচয়ে যে তিনি সন্ন্যাস দিয়েছিলেন তার প্রামাণ্যতা সম্পর্কে অনেক বিতর্ক আছে। বৈশিষ্ট্য হল নামকরণ। শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য তার নাম দেন কেশব ভারতী প্রভু। শঙ্করের মঠাম্নায়ে স্পষ্ট করেই উল্লিখিত আছে যে ভারতী সন্ন্যাসীর নৈষ্ঠিকব্রহ্মচারীর নামান্তে চৈতন্য উপাধি হয়। সন্ন্যাসের নামে চৈতন্য থাকে না ফলে ভারতী প্রভু সন্ন্যাস দিয়েছিলেন না নৈষ্ঠিক ব্রহ্মচর্য তাও ধোঁয়াসাতেই আছে। যাক বর্তমানেও গৌড়ীয় বৈষ্ণবদের মধ্যে নিত্যানন্দ পরিবার, অদ্বৈত পরিবার শুদ্ধ মাধ্বমতের অনুকুল সাধন প্রদান করে। সারা ভারতে চারমঠ দশ সম্প্রদায় বৈষ্ণব ছাড়া অন্য কেঊ প্রামাণ্য নয়। প্রত্যেকের মঠাম্নায়ের মত নিজস্ব ধামছত্র আছে। শ্রীতোতারাম দাস বাবাজী বলেছেন~ আঊল বাঊল কর্তাভজা নেড়া দরবেশ সাঁই। সহজিয়া সখী ভেকী স্মার্ত জাতগোঁসাই। । অতিবড়ী চূড়াধারী গৌরাঙ্গনাগরী তোতা কহে এ তেরর সঙ্গ নাহি করি। এই তের প্রকার বৈষ্ণব বলে দাবিদারেরা কখনই বৈষ্ণব বলে শাস্ত্র সিদ্ধ নয় তাই পরিত্যজ্য। আর বর্তমান ঢপের চপ অপসিদ্ধান্ত ও ইস্কনি গোষ্ঠি নিয়ে মোই পঞ্চদশ প্রবঞ্চক মেকী বৈষ্ণবদের থেকে সাধু সাবধান।

©️(*অনুলিপিকরণ বর্জনীয় শ্রী শুভম মন্ডল*)

Share This Article :

TAMBAHKAN KOMENTAR

7599550894000336510