BLANTERVIO103

শরভরুপে শিবকর্তৃক নৃসিংহদেবের তেজ হরণ

শরভরুপে শিবকর্তৃক নৃসিংহদেবের তেজ হরণ
Monday, February 10, 2020


বিষ্ণুবিদ্বেষী হরিণ্যকশিপুর ছোট ছেলে প্রহ্লাদ, শ্রীহরির একান্ত ভক্ত । বিষ্ণুবিদ্বেষী হরিণ্যকশিপুর নিধন কারার জন্য শ্রীহরি ভক্তের ডাকে স্ফটিক স্তম্ভের মধ্য দিয়ে আবির্ভূত হলেন নৃসিংহ রূপে । উপর দিকে মানুষের মতো বলে এঁর নাম নর -সিংহ । ভয়ংঙ্কর তার মূর্তি, ভীষণ তার গর্জন । আর হাতের নখ গুলো করাতের মতো ধারালো ।

ব্রহ্মার বরে বলীয়ান হিরণ্যকশিপু দিনে কিংবা রাতে , ঘরে কিংবা বাইরে , জলে - স্থলে - আকাশে ব্রহ্মার সৃষ্টি কোন প্রাণীর দ্বারা, এমনকি কোন অস্ত্রশস্ত্রে মরবে না । তাহলে তার মৃত্যু হবে কিসে ? হিরণ্যকশিপু ভাবলো যে সে তাহলে অমর ।

জগতে কেউ অমর নয় , সকলেরই মৃত্যু আছে । তাই ব্রহ্মার বরকে রক্ষা করবার জন্য ঠিক সন্ধ্যার, সময় দরজার গোড়ায়, নৃসিংহ দেব তার ঊরুর উপরে হিরণ্যকশিপুকে কে রেখে কোন অস্ত্রছাড়া নখের আঁচড়ে তার বুক চিরে বিনাশ করলেন তাকে । প্রচুর রক্তের স্রোত দেখে নৃসিংহদেব মাথা ঠিক রাখতে পারলেন না । শ্রীহরি তার আসল পরিচয় ভুলে নিজের দশটি নখের দ্বারা সামনে যত দানবকে দেখতে পেলেন সবাইকে বিনাশ করলেন । রক্তের নেশায় উন্মাদ হয়ে প্রচণ্ড গর্জনে দাপাদাপি করে বেড়াতে লাগলেন । যেন ত্রিভুবন ধ্বংস করে ফেলবেন ।

ব্রহ্মাদি দেবতাগণ দূরে দাঁড়িয়ে তার বহু স্তব স্তুতি করলেন । সেই স্তুতির মধ্যে তাকে জানানো হল যে তিনি সামান্য সিংহ মাত্র নন , দৈত হরিণ্যকশিপুর বিনাশ করার জন্য দেবতাদের অনুরোধে তিনি এমন বীভৎস রূপ ধারণ করেছেন । কাজ সমাপ্ত । এখন তিনি নিজেকে সংবরণ করুন । এই উন্মাদনায় সৃষ্টি লোপ পেতে বসেছে । এই ধ্বংসলীলা থেকে নিজেকে বিরত করুন । নরসিংহদেব ভীষণভাবে তর্জন গর্জন করায় দেবতাদের স্তুতিবাক্য তার কানে প্রবেশ করল না । এই বিপদ থেকে রক্ষা পাবার জন্য ব্রহ্মা অন্য দেবতাদের নিয়ে কৈলাসে গিয়ে শিবের কাছে বহু স্তুতি স্তবস্তুতি করলেন । শিবকে বললেন যে নরসিংহদেবের কবল থেকে ত্রিভুবনকে রক্ষা করুন এবং সকলের হিতের জন্য নিসিংহের তেজ বিনাশ করুন ।

ব্রহ্মার বিনীত নিবেদন শুনে শিব অভয় দিয়ে বললেন যে, কোনো ভয় নেই, সবাইকে রক্ষা করার জন্য তিনি নৃসিংহদেবের তেজ হরন করবেন ।

ব্রহ্মা এবং অন্যান্য দেবগন শিবের আশ্বাস পেয়ে সেই নৃসিংহদেব কাছে ফিরে গেলেন । এরপর সকল গণের অধিনায়ক বীরভদ্রেরকে মহাদেব স্মরণ করতেই সে উপস্থিত হলো । বিকট তার মূর্তি, যেন সাক্ষাৎ যম, দক্ষের বিশাল যজ্ঞ লন্ডভন্ড হয়েছিল বীরভদ্রের দাপটে । শিবকে প্রনাম করে সে জানতে চাইল কিসের জন্য তাকে স্মরণ করা হয়েছে ?

মহাদেব বললেন -- শ্রীহরি নৃসিংহ মূর্তি ধারণ করে হিরণ্যকশিপুকে বধ করে নিজের অস্তিত্ব ভুলে রক্তপিপাসু সিংহের মত বিচরণ করে আতঙ্কের সৃষ্টি করছেন । তাঁকে যেমন করে হোক সংযত করতে হবে ।

গর্বভরে বীরভদ্র বলল, সে কি তার মুণ্ডু ছিড়ে নিয়ে আসবে , যেমন এনেছিল প্রজাপতি দক্ষের । মহেশ্বর তার কথায় বাধা দিয়ে বললেন - না , তাঁকে আগে ভালোভাবে বুঝিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করতে হবে । তাতে যদি কোন ফল না হয় , তখন তাঁর মুণ্ডুটাই ছিঁড়ে আনব।

যেখানে নৃসিংহদেব দাপাদাপি করছেন সেখানে যাবার আদেশ পাওয়া মাত্রই ছুটল বীরভদ্র । ভীষণাকৃতি বীরভদ্রকে দেখে রক্তমাখা দেহেই নৃসিংহদেব একটু থমকে দাঁড়ালেন । তখন বীরভদ্র তাঁকে প্রণাম করে বলল - আপনি কি করছেন ? আপনি কি ভুলে গেছেন যে আপনি জগতের পিতা ? মৎস্য , কূর্ম, বরাহদি রূপে জগতকে বারে বারে আপনি রক্ষা করেছেন । নৃসিংহ রূপের কাজ শেষ হয়েছে , এবার লীলা সম্বরণ করুন । এই ভীষণ রূপ ত্যাগ করে ত্রিভুবনের সকলকে নির্ভয় করুন ।

বীরভদ্রের কথা শুনে নৃসিংহদেব ভীষণভাবে গর্জন করে বললেন - সাবধান বীরভদ্র , আমাকে উপদেশ দিও না । তুমি জানো না আমার স্বরূপ । আমার কাছে নতি স্বীকার করে তোমার প্রভুর কাছে ফিরে যাও ‌। আমি বিষ্ণু, ব্রহ্মা আমার পুত্র , আর শিব ব্রহ্মার পুত্র । সৃজন , পালন , সংহার সবকিছুই আমি করি । আমারই অংশে এই সকল দেবগন এখন আমার ইচ্ছা হচ্ছে সবকিছু সংহার করবার । তুমি বলার কে ?

শ্রীহরির কথা শুনে ভীষণভাবে গর্জন করে বীরভদ্র বলল - তুমি মহেশ্বরকে পৌত্ররূপে জ্ঞান করছো হে বলবান সিংহ । কিন্তু তাহলেও তুমি স্রষ্টা কিংবা সংহর্তা ও স্বাধীন কিছুই হতে পারছ না । তোমার কপালে এখনও বর্তমান তোমার কূর্মরূপের চিহ্ন । যখন তুমি বরাহরূপ ধারণ করে হিরণ্যাক্ষকে বধ করতে গিয়েছিলে , তখন সেই দৈত্য শিববরে বলীয়ান হয়ে তোমার একটা দাঁত তুলে নিয়েছিল , তুমি নিশ্চয়ই ভুলে যাওনি । দক্ষের শিবহীন যজ্ঞে তুমি আমার হাতে যে সাজা পেয়েছিলে তা নিশ্চয়ই মনে আছে । ব্রহ্মাকে নিজের ছেলে বলে পরিচয় দিচ্ছো , সেই ব্রহ্মা শিব নিন্দা করেছিল বলে ভগবান শঙ্কর তাঁর পঞ্চম মাথাটি ছিঁড়ে ফেলেছিল । আশা করি তা মনে আছে । তোমার কি মনে আছে যে তুমি শিবভক্ত দধীচ মুনির কাছে যুদ্ধে হেরেছিলেন জগতে তুমি চক্রধারী নামে পরিচিত যে সুদর্শন চক্র ধারণ করে , সেটি কে দিয়েছিল , মনে হয় তা ভুলেই গেছ । আজ কি তোমার মনে নেই যে তুমি বিষক্ সেন রূপে রুদ্রের শূলাগ্রে দগ্ধ হয়েছিলে। জগতের পালনের দায়িত্ব তোমায় দেওয়া হয়েছে ঠিকই , কিন্তু এখন তুমি সৃষ্টি আর সংহারের কর্তা হতে চাইছ । এমন পাগলের মতো কথা বোলো না ।

এই কথাগুলি বীরভদ্র ব্যঙ্গের হাসি হাসতে হাসতে বলেই আবার ভয়ংকর শব্দে হুঙ্কার করে বলল - এখুনিই এই ভয়ঙ্কর ধ্বংসলীলা সম্বরণ করো হে বিষ্ণো , তা যদি না করো , তবে শিবশক্তির প্রভাব এখনই দেখতে পাবে ।

নৃসিংহরুপী বিষ্ণু বীরভদ্রের এমন ক্রুদ্ধমূর্তি দেখে আরো রেগে গিয়ে মহা হুঙ্কার করে বীরভদ্রকে যেই আক্রমণ করতে গেলেন , তখনই আকাশ থেকে হঠাৎ এক বিশালাকার শরভ নেমে এলো । সেই শরভের হাজার হাত , মস্তকে জটা , তাতে অর্ধচন্দ্র , দেহের অর্ধেক দেহ হরিণের মতো ,পক্ষ দুটি বিশাল , চক্ষু আর দাঁতগুলি অতি ধারালো , তিনটি চোখ থেকে আগুনের হল্কা বেরোচ্ছে । সে ভীষণভাবে গর্জন করছে । নৃসিংহরুপী বিষ্ণু সেই শরভমূর্তি দেখে এবং ভয়ঙ্কর গর্জন শুনে , দুর্বল ও অবাক হয়ে পড়লেন । সেই শরভের তেজের কাছে নিজেকে জোনাকির মতন মনে হল । হঠাৎ সেই শরভ নৃসিংহকে পায়ের ফাঁকে বেঁধে ডানার ঝাপটা মেরে ভীষণ ঝড়ের সৃষ্টি করে শূন্যপথে উঠে আবার মাটিতে নেমে এলো । আবার শূন্যে উড়ে গেল । শূন্য থেকে শরভরুপী শিবের বিক্রম দেখে ব্রহ্মা এবং অন্যান্য দেবতারা স্বস্তি বোধ করলেন । ত্রিভুবন নাশের ভয় নিবারিত হলো ।

শরভের বিক্রমের কাছে নৃসিংহদেবকে হার মানতে হলো । শরভরুপী মহাদেবের শরণাপন্ন হয়ে তিনি বহু স্তবস্তুতি করলেন ।

তারপর বললেন - হে পরমেশ্বর , আমার অহঙ্কারজনতি মহো যখন উপস্থিত হবে , আপনি তখন নিবারণ করতে ক্ষান্ত হবেন না ।

এই প্রার্থনা করে নরসিংহ শান্তভাব ধারণ করলেন । এরপর বীরভদ্র নরসিংহের মুণ্ড ছেদন করে , তাঁর গায়ে ছাল ছাড়িয়ে মহাদেবকে উপহার দিলেন । মহাদেব বসনরূপে সেই ছালটিকে ব্যবহার করলেন ।

তারপর সব দেবতারা মহেশ্বরের অনেক স্তবস্তুতি করলেন । তখন শরভরুপী মহেশ্বর বললেন - এই নরসিংহরুপী বিষ্ণু আমার মধ্যে লীন হয়েছেন । উভয়েই আমরা অভিন্ন । জগতের সংহার করতে এই মহাবলদর্পকারী নৃসিংহই প্রবৃত্ত আছেন । আমাতে ভক্তিমান হয়ে যাঁরা সিদ্ধি কামনা করেন , এই মহাবলদর্পকারী নৃসিংহকেই পূজা ও নমস্কার করুন । এই উপদেশ দিয়ে ভগবান মহেশ্বর অন্তর্হিত হলেন ।

তথ্য:- লিঙ্গ পুরাণ,, শরভরূপে শিব কর্তৃক নরসিংহদেবের তেজ হরণ ।
And In the Atharva Veda, the tenth of thirty-one Upanishads is the Sharabha Upanishad, which glorifies Lord Shiva in his fierce Sharabha manifestation. Verse 3 of this Upanishad states that Maheswarah took the form of Sharabha and killed Narasimha.

সংগ্রহ:- অষ্টাদশ পুরাণ সমগ্র অখন্ড সংস্করণ,, প্রকাশক শ্যামাপদ সরকার,, মুদ্রা কার ঈশিতা আপ সেট, কলকাতা- 67
Share This Article :

TAMBAHKAN KOMENTAR

7599550894000336510