BLANTERVIO103

একাদশী ব্রতের পাপ-পুণ্যের ভাঁওতাবাজি।

একাদশী ব্রতের পাপ-পুণ্যের ভাঁওতাবাজি।
Wednesday, February 12, 2020
মানুষ কে পাপ কর্মে উৎসাহ প্রদান করার জন্য এবং কল্যাণকর কর্ম করতে নিরুৎসাহিত করার জন্যই মন্দবুদ্ধি সম্পন্ন লোকেরা একাদশী নামক প্রথার প্রচলন করেছিল। কিরকম??
একাদশী প্রথার উদ্ভব কারী গণ দাবী করেন---
মদ্যপান, গুরুপত্নী ধর্ষণ, স্ত্রীহত্যা, গোহত্যা পাপ, ধন অপহরণ, ভ্রুণহত্যা, আত্মীয়স্বজন বধ, পিতৃহত্যা, দ্যুতক্রীড়া ইত্যাদি যতই ঘৃণিত পাপ কর্ম করেন না কেন, একাদশী ব্রত পালন করলে সমস্থ পাপ বিনষ্ট হয়ে যায়। এই ব্রতপালনকারি দিব্য দেহ লাভ করে, স্বর্গ, বৈকুণ্ঠে গমন করে। এমনকি কেও সারা জীবন যতই পাপ করুক না কেন; নিজের মনের অজান্তেও যদি একাদশী থাকে। তাহলেও স্বয়ং যমরাজ ভয় পেয়ে দণ্ডবৎ প্রণাম জানিয়ে, ব্রতপালনকারীর পূজা করেন।
বিচার করে দেখুন-- কোন পাপী কে তার পাপকর্মের শাস্তি না দেয়ার অর্থ কি? অর্থাৎ সেই পাপী কে আরো গুরুতর পাপ করারা জন্য উৎসাহ দেওয়া। এবং যারা পাপকাজ করে না তারাও নির্ভয়ে পাপকর্ম করবে। ধরুন! কোন দস্যু একজন পথচারী কে হত্যা করে তার সম্পদ লুট করল। তারপর সে তার পাপের শাস্তি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য; নানা স্থানে গিয়ে রাজার প্রসংসা করতে লাগল। রাজার আজ্ঞা পালন কারি প্রজার মত তার সেবা করা শুরু করল। রাজা যখন দস্যুর কু-কর্মের কথা জানবে, তখন একজন ন্যায়পরায়ণ রাজা হিসাবে তিনি কি সেই দস্যু খুনি কে ক্ষমা করে দিবেন? তিনি যদি দস্যুর সেবায় খুশি হয়ে তাকে ক্ষমা করে দেন, তাহলে যে পথচারী কে হত্যা করা হল সেই পথচারী ও তার পরিবারে প্রতি রাজা অন্যায় করবেন। অন্য দিকে রাজার অন্যান্য জনসাধারণ মনে করবে পাপকার্য্য করে রাজার সেবা করলে রাজা খুশি হয়ে ক্ষমা করে দেন। তাহলে চল আমরা এই সুযোগ কাজে লাগায়। একিভাবে একাদশী ব্রত পালন করলে, যে ঈশ্বর সকল পাপ ক্ষমা করে দেন সেই ঈশ্বর কখনো ন্যায়কারী হতে পারে না। সেই ঈশ্বরের প্রতি তখন পক্ষপাতদুষ্ট দোষ লাগে। তাই সকল কর্মের যথোচিত ফল প্রদান করাই ঈশ্বরের কার্য্য, ক্ষমা করা নয়। এই সব পাপ বিনষ্ট কারি একাদশীর মত কু-প্রথা দুষ্ট বুদ্ধিসম্পন্ন লোকেরা সৃষ্টি করেছে মানুষ কে আরো পাপ কর্মে উৎসাহ দেয়ার জন্য, ধর্মের নামে সমাজে নানা অনাচার সৃষ্টি করার জন্য।
আবার, অন্যদিকে একাদশী প্রথার উদ্ভব কারী গণ দাবী করেন---
একাদশী পালন করলে যে পুণ্যে ফল লাভ হয়, অশ্বমেধ, রাজসূয় যজ্ঞ, ধন-সম্পদ দান করলেও নাকি সে পুণ্য হয় না। গজদান, ভূমিদান, স্বর্ণদান, অন্নদান, গোদান ইত্যাদি কোন পুণ্যকর্ম নেই যা একাদশী ব্রতের সমান নয়। এমনকি দশ হাজার বৎসর তপস্যা ফল কেবলমাত্র এক একাদশী ব্রত পালনে লাভ হয়ে যায়। এই ব্রত কথা শুধু মাত্র শ্রবন কীর্তন করলেই নাকি সহস্র গোদানের ফল হয়ে যায়। আহারে! পাপের খন্ডন করা আর পুণ্যে কামনো কতই না সহজ!!!
মানুষের শুধুমাত্র নিজের উন্নতিতেই সন্তুষ্ট থাকা উচিত নয়, কিন্তু সকলের উন্নতিকে নিজের উন্নতি ভাবা উচিত। ভূমিহীন কে ভূমি দান করা, গোদান করা, দরিদ্র পিতা কে তার কন্যার বিবাহের জন্য স্বর্ণদান করা, অনাহারী কে অন্নদান করা অপেক্ষা আর কি বা পুণ্যকর্ম হতে পারে? কিন্তু এই সব মহৎ কর্ম থেকে যেহেতু একাদশী থাকলে বেশী পুণ্য হয় তাহলে আর এগুলা করার দরকার টা কি? শুধু একাদশী থাকলেই তো হয়। এমন ধারণা কি মানুষের মনে উদয় হবে না?
এই ভাবেই ব্রত প্রচলন কারিগণ কল্যাণকর, মঙ্গলময়, সমাজের উন্নতি মূলক কাজ করা থেকে মানুষকে নিরুৎসাহিত করেছে। সূক্ষ্ণ ভাবে তারা মানুষের মনে স্বার্থপর মনোভাব তৈরি করেছে। যারা এই একাদশী ব্রত প্রচলন করেছে, তাদের মধ্যে কেবল স্বার্থপরতাই আছে। একাদশী ব্রতকথা অনুসারে ধর্মকীর্তি নামক এক রাজা সারা জীবন পাপকর্মে লিপ্ত থেকেও, মনের অজান্তে একাদশী থেকে ছিলেন। আর তাতেই তার সব পাপ বিনষ্ট হয়ে যায়। এমনি কি যমরাজ পর্যন্ত তাকে প্রণাম করে পূজা করেছিলেন। তাহলে বৈষ্ণবরা স্বজ্ঞানে একটা একাদশী থাকলেই তো তাদের সব পাপ বিনষ্ট হয়ে যায়, দিব্য রথে চড়ে বৈকুণ্ঠে গমন করতে পারে। তবে বৈষ্ণব দের ২৫-২৬ টা একাদশী ব্রত আমদানি করার প্রয়োজন পড়ল কেন?
যুগ যুগ ধরে বেদের আলোকে আমাদের পূর্ব্বকালীন প্রজ্ঞাবান ঋষিগণ মানব কল্যাণের জন্য যজ্ঞ অনুষ্ঠান করেছেন এবং আমাদের কে সেই শিক্ষা দিয়েছেন। আমাদের কে কর্ম করার শিক্ষা দিয়েছেন। কিন্তু সেই মূল ধারার সনাতন ধর্ম থেকে বাহির হয়ে; অন্য একটা মতবাদ সৃষ্টি করে একাদশীপ্রথার উদ্ভব কারি গণ, বলে যজ্ঞ অপেক্ষা একাদশী প্রথা আরো উচ্চপর্যায়ের, উচ্চ ফল প্রদায়ক অর্থাৎ এরা বেদের বিরুদ্ধে গিয়ে, সনাতন ধর্মের বিরুদ্ধে গিয়ে আমাদের ঋষিগণ কেও অপমান করছে। কিন্তু আশ্চর্যজনক হচ্ছে এই মতবাদ গুলা কে ওরা সনাতন ধর্মের নামে আমাদের খাওয়াচ্ছে আর আমরা নির্বোধের মত সেগুলা খাচ্ছি।
● সত্যমেব জয়তেঃ
Share This Article :

TAMBAHKAN KOMENTAR

7599550894000336510