BLANTERVIO103

হরিদাস সিদ্ধান্ত বাগীশ মহাভারতে ব্রহ্মসংহিতা তথ্যের খন্ডন

হরিদাস সিদ্ধান্ত বাগীশ মহাভারতে ব্রহ্মসংহিতা তথ্যের খন্ডন
Sunday, March 1, 2020




প্রিয় সনাতনী সুধী, তথাকথিত বৃহৎ এক গ্রন্থ আমাদের সনাতনী সমাজের মধ্যে আছে, যাঁর নাম মহাভারত সংহিতা তথা মহাভারত। এই মহাভারত গ্রন্থটি লক্ষ শ্লোকের কিন্তু বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে এবং বিভিন্ন মহাভারত গ্রন্থ অনুবাদক নিজেদের প্রকাশিত মহাভারতের মধ্যে উল্লেখ করেছেন যে, পরিপূর্ণ ভাবে মহাভারত গ্রন্থ পাওয়া দুষ্কর!!! কেননা, পুঁথি স্বরূপ মহাভারত গ্রন্থের বেশ কিছু পাতা খুঁজে পাওয়া যায় না।

আর সেই সুবাদে অনেক মহাভারত অনুবাদ জায়গায় জায়গায় নিজেদের সম্প্রদায়ের ছাপ তথা কাল্পনিকতার নিদর্শন ছেড়ে দিয়েছে!! আবার অনেকে শ্লোকের ত্রিপদী, দ্বিপদী করে অনুবাদ হেরফের করার চেষ্টা করেছেন!! এইসবের একমাত্র লক্ষ্যে বা কারণ হচ্ছে, নিজেদের কিছু কাল্পনিক চরিত্র বা নিজেদের কাল্পনিক গ্রন্থ বা নিজেদের উপাস্যকে সর্বশ্রেষ্ঠ বা সর্বোত্তম স্থানে প্রতিষ্ঠিত করা।

আজ ঠিক সেই ভাবে একটি কৈষ্ণবীয় গ্রন্থের অস্তিত্বের ইতিহাস তুলে ধরতে যাচ্ছি, আর সেই গ্রন্থটির নাম হচ্ছে ব্রহ্মসংহিতা, আবার চৈতন্য চরিতামৃত বইয়ের মধ্যে এই ব্রহ্মসংহিতার কিছু তথ্য উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন যে, এই গ্রন্থটি সুদূর দক্ষিণ ভারত থেকে নিমাই চক্রবর্তী সংগ্রহ করেছিলেন! কিন্তু প্রকৃত অর্থে এই কথার প্রয়োজন আছে বলে বোধ করি না, কেননা নিমাই চক্রবর্তী যেখান থেকে খুঁজে আনুক সেটা এইখানে প্রাধান্য দেয় না, প্রাধান্য দেয় ব্রহ্মসংহিতা নামক বইটি সনাতনী শাস্ত্রের ও গ্রন্থের কোন্ অংশ থেকে বেরিয়েছে।

আমি এই কথা বলার মূল কারণ হচ্ছে, প্রত্যেক সম্প্রদায় সনাতনী বিভিন্ন শাস্ত্র ও গ্রন্থ থেকে কিছু কিছু তথ্য বা অংশ নিয়ে নিজেদের সম্প্রদায়ের বা পরম্পরার রীতিনীতি তৈরি করেছেন। যেখানে নিজেদের উপাস্য উপাসনা, ধর্মীয় নীতি, জীবন চরিত্রের অনুশাসন ইত্যাদি ইত্যাদি। বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের রচিত ব্রহ্মসংহিতা নামক বইটি সনাতনী শাস্ত্র তো দূরের কথা, পৃথিবীর কোনো প্রকার গ্রন্থের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় না। খুঁজে না পাওয়ারই কথা, কেননা যে বই নিজেদের কল্পনার রঙে, নিজেদের মনগড়া কথা নিয়ে তৈরি তাঁর অস্তিত্ব না থাকারই কথা।

কিন্তু সম্প্রতি বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের কিছু পণ্ডিত হরিদাস সিদ্ধান্ত বাগীশ মহাভারতের মধ্যে ব্রহ্মসংহিতার অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন, যথা- মহাভারত শান্তিপর্বের অষ্টপঞ্চাশত্তমোহধ্যায়ঃ এর ১৩১নং শ্লোক হতে ১৪৩নং শ্লোকের মধ্যে, যথারীতি হরিদাস সিদ্ধান্ত বাগীশ মহাভারতে অধ্যায়টি বর্ণনা করেছেন- রাজধর্ম্ম সূত্রাধ্যায়। তাহলে চলুন, দেখা যাক কি কি তুলে ধরেছেন হরিদাস সিদ্ধান্ত বাগীশ••••••

শ্রীঃ সম্ভুতা যতো দেবী পত্নী ধর্ম্মস্য ধীমতঃ।
শ্রিয়ঃ সকাশাদর্থশ্চ জাতো ধর্ম্মেণ পাণ্ডব।।১৩১
অনুবাদ:- পাণ্ডুনন্দন! ধীমান্ ধৰ্ম্মের সহচারিণী লক্ষ্মীদেবী যে পদ্ম হইতে উৎপন্ন হইয়া - ছিলেন। ধর্ম্মের প্রভাবে সেই লক্ষ্মীদেবী হইতে অর্থ প্রাদুর্ভূত হইযাছিল।

অথ ধৰ্ম্মস্তথৈবার্থঃ শ্ৰীশ্চ রাজ্যে প্রতিষ্ঠিতা।
সুকৃতস্য ক্ষয়াচ্চৈব স্বর্লোকদেত্য মেদিনীম্।।১৩২
পার্থিবাে জায়তে তাত! দণ্ডনীতিবিশারদঃ।
মহত্ত্বেন চ সংযুক্তো বৈষ্ণবেন নরাে ভুবি।।১৩৩
অনুবাদ:- তারপর পৃথুব রাজ্যে ধর্ম্ম, অর্থ ও লক্ষ্মী প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল। বৎস যুধিষ্ঠির! এদিকে মানুষ, ভােগে পুণ্য ক্ষয় হইয়া গেলে, স্বর্গলােক হইতে মত্ত্যলােকে আসিয়া, দণ্ডনীতিবিশারদ ও বিষ্ণুর মাহাত্ম্যযুক্ত রাজা হইয়া জন্ম গ্রহণ করে।

বুদ্ধা ভবতি সংযুক্তো মাহাত্ম্যঞ্চাধিগচ্ছতি।
স্থাপিতঞ্চ ততো দেবৈর্ন কশ্চিদতিবৰ্ত্ততে।
তিষ্ঠত্যেকস্য চ বশে তঞ্চেদং ন বিধীয়তে।।১৩৪
অনুবাদ:- তদন্তর সেই রাজা রাজ্যশাসনের উপযােগিনী বুদ্ধি ও মাহাত্ম্য লাভ করেন , আর দেবতাবা রাজত্বপদে স্থাপন করেন বলিয়া কেহই তাহাকে অতিক্রম করিতে পারে না। তৎপরে সমগ্র জগৎটাই একমাত্র সেই রাজার অধীনে থাকে। কিন্তু বিধাতা এই অধীনতা করেন না। রাজার গুণেই প্রজারা তাহার অধীন হইয়া পড়ে।


শুভং হি কৰ্ম্ম রাজেন্দ্র! শুভত্বায়ােপকল্পতে।
তুল্যস্যৈকস্য যস্যায়ং লােকো বচসি তিষ্ঠতি।।১৩৫
অনুবাদ:- বাজশ্রেষ্ঠ! হস্তপদপ্রভৃতি অঙ্গ সকল সমান হইলেও সমস্ত লোক, যে এক ব্যক্তির আদেশের অধীন হইয়া থাকে; সেই এক ব্যক্তিরই শুভকর্ম সমগ্র জগতের শুভ উৎপাদন করিতে সমর্থ হয়।

যােহস্য বৈ মুখমদ্রাক্ষীৎ সৌম্যং সােহস্য বশানুগঃ।
সুভগং চার্থবন্তঞ্চ রূপবন্তঞ্চ পশ্যতি।।১৩৬
অনুবাদ:- যে লােক পৃথুব সুন্দর মুখমণ্ডল দর্শন করিত; সেই লােকই পৃথুব বশীভূত হইত। কেন না, সেই লােক পৃথুকে প্রিয়মূৰ্ত্তি, শুভলক্ষণসম্পন্ন ও রূপবান্ দেখিত।

মহত্ত্বাত্তস্য দণ্ডস্য নীতির্বিস্পষ্টলক্ষণা।
নয়াচারশ্চ বিপুলাে যেন সৰ্ব্বমিদং ততম্।।১৩৭
আগমশ্চ পুরাণানাং মহর্ষীণাঞ্চ সম্ভবঃ।
তীর্থবংশশ্চ বংশশ্চ নক্ষত্রাণাং যুধিষ্ঠির!।।১৩৮
সকলং চতুরাশ্রম্যং চাতুর্হোত্রং তথৈব চ।
চাতুৰ্ব্বৰ্ণ্যং তথৈবাত্র চাতুর্বিদ্যঞ্চ কীৰ্ত্তিতম।।১৩৯
অনুবাদ:- সে যাহা হউক, যুধিষ্ঠির! ব্ৰহ্মপ্রণীত সেই বিশাল শাস্ত্রে এই সমস্ত বিষয়ও বর্ণিত হইয়াছিল। সুস্পষ্টলক্ষণ দণ্ডনীতি এবং নীতিপ্রতিষ্ঠিত যে আচারে অদ্যাপি এই জগৎ ব্যাপ্ত বহিয়াহে, সেই বিশাল নীতিপ্রতিষ্ঠিত আচার, পুরাণশাস্ত্র ও মহর্ষি-গণের উৎপত্তি, তীর্থসমূহ ও নক্ষত্রসমূহ, ব্ৰহ্মচৰ্য্যপ্রভৃতি চারিটী আশ্রম, হােতা ও আচাৰ্য্যপ্রভৃতি চারিপ্রকার ঋত্বিক, ব্রাহ্মণপ্রভৃতি চারিবর্ণ, আর তর্কবিদ্যা প্রভৃতি চারিপ্রকার বিদ্যা।

ইতিহাসশ্চ বেদাশ্চ ন্যায়ঃ কৃৎস্নশ্চ বর্ণিতঃ।
তপো জ্ঞানমহিংসা চ সত্যাসত্যে নয়ঃ পরঃ।।১৪০
অনুবাদ:- ইতিহাস, বেদ, সমস্ত ন্যায়, তপস্যা, জ্ঞান, অহিংসা, সত্য, মিথ্যা এবং উত্তম ধর্মনীতিও সেই শাস্ত্রে কথিত হইয়াছিল।

বৃদ্ধোপসেবা দানঞ্চ শৌচমুত্থানমেব চ।
সৰ্ব্বভূতানুকম্পা চ সৰ্ব্বমত্রোপবর্ণিতম্।।১৪১
অনুবাদ:- বৃদ্ধসেবা, দান, শৌচ, কার্য্যেদ্যম এবং সমস্ত প্রাণীর প্রতি দয়া, এই সমস্ত বিষয়ই ব্ৰহ্মা সেই শাস্ত্রে বর্ণনা করিয়াছিলেন।

ভুবি চাধােগতং যচ্চ তচ্চ সৰ্ব্বং সমর্পিতম্।
তস্মিন্ পৈতামহে শাস্ত্রে পাণ্ডবৈতন্ন সংশয়ঃ।।১৪২
অনুবাদ:- পাণ্ডুনন্দন! ভূতলে ও পাতালে যে কিছু আছে, সে সমস্তই সেই ব্ৰহ্মসংহিতায় উল্লিখিত ছিল; এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই।

ততো জগতি রাজেন্দ্র! সততং শব্দিতং বুধৈঃ।
দেবাশ্চ নরদেবাশ্চ তুল্যা ইতি বিশাম্পতে!।।১৪৩
অনুবাদ:- নরনাথ রাজশ্রেষ্ঠ! তদবধি অভিজ্ঞ লােকেরা জগতে এইরূপ ঘােষণা কবিয়া আসিতেছেন যে-দেবতা ও রাজা সমান।


কিন্তু সংস্কৃত মহাভারতের মধ্যে এই তথ্যটি সম্পূর্ণ রূপে ভিন্ন দেখা যায়! কিন্তু তার আগে আমি সংস্কৃত মহাভারতের শ্লোক ও শ্লোকের অনুবাদ বর্ণনা তুলে ধরছি তা একটু মনোযোগ সহকারে পড়বেন ও দেখবেন •••

বিষ্ণোর্ললাটাত্ কমলং সৌবর্ণমভবত তদা।
শ্রীঃ সম্ভুতা যতো দেবী পত্নী ধর্ম্মস্য ধীমতঃ।।১৩১
অনুবাদ:- সেই সময় ভগবান বিষ্ণুর কপাল থেকে এক সুবর্ণময় পদ্ম প্রকট হয়, যাঁর থেকে বুদ্ধিমান ধর্মের পত্নী শ্রীদেবীর আবির্ভাব ঘটে।

শ্রিয়ঃ সকাশাদর্থশ্চ জাতো ধর্ম্মেণ পাণ্ডব।
অথ ধৰ্ম্মস্তথৈবার্থঃ শ্ৰীশ্চ রাজ্যে প্রতিষ্ঠিতা।।১৩২
অনুবাদ:- পাণ্ডুনন্দন! ধর্মের দ্বারা সেই শ্রীদেবীর থেকে অর্থের উৎপত্তি হয়। তদন্তর ধর্ম, অর্থ, শ্রী তিনটিই রাজ্যের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়।

সুকৃতস্য ক্ষয়াচ্চৈব স্বর্লোকদেত্য মেদিনীম্।
পার্থিবাে জায়তে তাত! দণ্ডনীতিবিশারদঃ।।১৩৩
অনুবাদ:- পৌত্র! পুণ্যের ক্ষয় হওয়ার পর মনুষ্য যখন স্বর্গলোক থেকে পৃথিবীতে আসে তখন দণ্ডনীতিবিশারদ রাজার রূপে জন্ম গ্রহণ করে।

মহত্ত্বেন চ সংযুক্তো বৈষ্ণবেন নরাে ভুবি।
বুদ্ধা ভবতি সংযুক্তো মাহাত্ম্যঞ্চাধিগচ্ছতি।।১৩৪
অনুবাদ:- সেই মনুষ্য এই পৃথিবীতে ভগবান বিষ্ণুর মহত্তের সাথে যুক্ত তথা বুদ্ধিসম্পন্ন হয়ে বিশেষ মাহাত্ম্য প্রাপ্ত করে ফেলেন।

স্থাপিতঞ্চ ততো দেবৈর্ন কশ্চিদতিবৰ্ত্ততে।
তিষ্ঠত্যেকস্য চ বশে তঞ্চেদং ন বিধীয়তে।।১৩৫
অনুবাদ:- তদন্তর তাঁকে দেবতাদের দ্বারা রাজার পদে স্থাপিত হয়েছে স্বীকার করে কেউ তাঁর আদেশের বিরুদ্ধে যেতো না। এই পুরো জগৎ সেই এক ব্যক্তির অধীনেই থাকে, যাঁর উপরে এই জগৎ নিজের শাসন চালাতে পারতো না।

শুভং হি কৰ্ম্ম রাজেন্দ্র! শুভত্বায়ােপকল্পতে।
তুল্যস্যৈকস্য যস্যায়ং লােকো বচসি তিষ্ঠতি।।১৩৬
অনুবাদ:- রাজেন্দ্র! শুভ কর্মের ফল শুভই হয়, কখনও অন্য মনুষ্যদের সমান হওয়ার পরেও একমাত্র রাজার আদেশে এই পুরো জগৎ অধীন হয়ে থাকতো।

যােহস্য বৈ মুখমদ্রাক্ষীৎ সৌম্যং সােহস্য বশানুগঃ।
সুভগং চার্থবন্তঞ্চ রূপবন্তঞ্চ পশ্যতি।।১৩৭
অনুবাদ:- যে রাজার সৌম্য মুখ দর্শন করেছে, সে তাঁর অধীন হয়ে গেছে। প্রত্যেক মনুষ্য রাজাকে সৌভাগ্যশালী, ধনবান ও রূপবান দেখে থাকেন।

মহত্ত্বাত্তস্য দণ্ডস্য নীতির্বিস্পষ্টলক্ষণা।
নয়াচারশ্চ বিপুলাে যেন সৰ্ব্বমিদং ততম্।।১৩৮
অনুবাদ:- পূর্বোক্ত দণ্ডের মহত্ত্বের স্পষ্ট লক্ষ্মণধারী নীতি তথা ন্যায় উচিত আচারের অধিক প্রচার হয়, যাঁর থেকে সে পুরো জগৎ জুড়ে ব্যাপ্ত হন।

আগমশ্চ পুরাণানাং মহর্ষীণাঞ্চ সম্ভবঃ।
তীর্থবংশশ্চ বংশশ্চ নক্ষত্রাণাং যুধিষ্ঠির!।।১৩৯
সকলং চতুরাশ্রম্যং চাতুর্হোত্রং তথৈব চ।
চাতুৰ্ব্বৰ্ণ্যং তথৈবাত্র চাতুর্বিদ্যঞ্চ কীৰ্ত্তিতম।।১৪০
অনুবাদ:- যুধিষ্ঠির! পুরাণশাস্ত্র, মহর্ষিদের উৎপত্তি, তীর্থসমূহ, নক্ষত্রসমুদায়, ব্রহ্মচর্যের চতুর্রাশ্রম, হোতাদি চতুর্প্রকারের ঋত্বিকের মাধ্যমে সম্পন্ন হওয়া যজ্ঞকর্ম, চতুর্বর্ণ ও চতুর্বিদ্যা পূর্বের নীতিশাস্ত্রের মধ্যে করা হয়েছে।

ইতিহাসশ্চ বেদাশ্চ ন্যায়ঃ কৃৎস্নশ্চ বর্ণিতঃ।
তপো জ্ঞানমহিংসা চ সত্যাসত্যে নয়ঃ পরঃ।।১৪১
বৃদ্ধোপসেবা দানঞ্চ শৌচমুত্থানমেব চ।
সৰ্ব্বভূতানুকম্পা চ সৰ্ব্বমত্রোপবর্ণিতম্।।১৪২
অনুবাদ:- ইতিহাস, বেদ, ন্যায় এই সবকিছুই সেখানে বর্ণনা করা হয়েছে। তপ, জ্ঞান, অহিংসা তথা যা সত্য, অসত্যের উর্দ্ধে আছে তাঁর এবং বৃদ্ধজনের সেবা, দান, শৌচ, উত্থান তথা সমস্ত প্রাণীদের উপরে দয়া সব বিষয়েই সেইসব গ্রন্থের মধ্যে বর্ণনা আছে।

ভুবি চাধােগতং যচ্চ তচ্চ সৰ্ব্বং সমর্পিতম্।
তস্মিন্ পৈতামহে শাস্ত্রে পাণ্ডবৈতন্ন সংশয়ঃ।।১৪৩
অনুবাদ:- পাণ্ডুনন্দন! অধিক কি আর বলবো! যা কিছু এই পৃথিবীর উপরে আছে এবং যা তাঁর নীচে আছে, সেই সবকিছু ব্রহ্মারও পূর্বের শাস্ত্রের মধ্যে একত্রিত করা হয়েছে। এতে কোনো সংশয় নেই।

ততো জগতি রাজেন্দ্র! সততং শব্দিতং বুধৈঃ।
দেবাশ্চ নরদেবাশ্চ তুল্যা ইতি বিশাম্পতে!।।১৪৪
অনুবাদ:- রাজেন্দ্র! প্রজানাথ! তখন থেকে জগতের বিদ্বানেরা চিরকালের জন্য এই ঘোষণা করেছিল যে "দেব এবং নরদেব"(দেবতা ও রাজা) দু'জনেই সমান।

এতত্তে সৰ্বমাখ্যাতং মহত্ত্বং প্রতি রাজসু।
কার্ৎস্ন্যেন ভরতশ্রেষ্ঠ! কিমন্যদিহ বর্ত্ততে।।১৪৫
অনুবাদ:- ভরতশ্রেষ্ঠ! এই প্রকারে রাজাদের যা মহত্ত্ব আছে, সেই সবকিছু আমি সম্পূর্ণরূপে তোমাকে বলে দিলাম! এখন এই বিষয়ে তোমার কাছে আর কি জানার বাকি রয়ে গেছে।

প্রিয় সনাতনী সুধী, সত্যি বলতে এইখানে হরিদাস সিদ্ধান্ত বাগীশ শ্লোকের কোনোরূপ পরিবর্তন করেননি হ্যাঁ উনি শ্লোক আগে পিছে করেছেন! এটা কোনো ব্যাপার না। কিন্তু উনি শ্লোকের অনুবাদ বর্ণনা যা তুলে ধরেছেন তা সম্পূর্ণরূপে প্রক্ষিপ্ত ও বিকৃতি পূর্ণ! হয়তো যাঁরা সংস্কৃতে পারদর্শী তাঁরা বুঝতে পারবেন কিন্তু যাঁরা সংস্কৃতে পারদর্শী নন তাঁরা এজীবনেও ধরতে পারবে না।

দেখুন, আমি আপনাদের সমীপে হরিদাস সিদ্ধান্ত বাগীশ মহাভারতের এই অষ্টপঞ্চাশত্তমোহধ্যায়ঃ এর দুটি শ্লোকের উপস্থাপন করছি এবং হরিদাস সিদ্ধান্ত বাগীশকে খন্ডন করছি••••• যথা-

বৃদ্ধোপসেবা দানঞ্চ শৌচমুত্থানমেব চ।
সৰ্ব্বভূতানুকম্পা চ সৰ্ব্বমত্রোপবর্ণিতম্।।১৪১
অনুবাদ:- বৃদ্ধসেবা, দান, শৌচ, কার্য্যেদ্যম এবং সমস্ত প্রাণীর প্রতি দয়া, এই সমস্ত বিষয়ই ব্ৰহ্মা সেই শাস্ত্রে বর্ণনা করিয়াছিলেন।



ঠিক এই শ্লোকটির অনুবাদ সংস্কৃত শ্লোকের মধ্যে উপস্থাপন করেছেন কিভাবে দেখুন ••••

বৃদ্ধোপসেবা দানঞ্চ শৌচমুত্থানমেব চ।
সৰ্ব্বভূতানুকম্পা চ সৰ্ব্বমত্রোপবর্ণিতম্।।১৪২
অনুবাদ:- বৃদ্ধজনের সেবা, দান, শৌচ, উত্থান তথা সমস্ত প্রাণীদের উপরে দয়া সব বিষয়েই সেইসব গ্রন্থের মধ্যে বর্ণনা আছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, মূল শ্লোকের মধ্যে ব্রহ্মার কোনো প্রকার অস্তিত্ব নেই কিন্তু হরিদাস সিদ্ধান্ত বাগীশ এইখানে অনুবাদে ব্রহ্মা কোথায় খুঁজে পেল? শ্লোকে বৃদ্ধোপসেবা এর অর্থ হচ্ছে বৃদ্ধজনের সেবা কিন্তু এই কৈষ্ণব পাঁঠা ছাগল বৃদ্ধকে ব্রহ্মা বানিয়ে দিয়েছে! সত্যিই অবাক করার মতো বিষয়!!!! চলুন এবার পরের শ্লোকটি দেখা যাক ••••

ভুবি চাধােগতং যচ্চ তচ্চ সৰ্ব্বং সমর্পিতম্।
তস্মিন্ পৈতামহে শাস্ত্রে পাণ্ডবৈতন্ন সংশয়ঃ।।১৪২
অনুবাদ:- পাণ্ডুনন্দন! ভূতলে ও পাতালে যে কিছু আছে, সে সমস্তই সেই ব্ৰহ্মসংহিতায় উল্লিখিত ছিল; এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই।

ঠিক এই শ্লোকটির অনুবাদ সংস্কৃত শ্লোকের মধ্যে উপস্থাপন করেছেন কিভাবে দেখুন ••••

ভুবি চাধােগতং যচ্চ তচ্চ সৰ্ব্বং সমর্পিতম্।
তস্মিন্ পৈতামহে শাস্ত্রে পাণ্ডবৈতন্ন সংশয়ঃ।।১৪৩
অনুবাদ:- পাণ্ডুনন্দন! অধিক কি আর বলবো! যা কিছু এই পৃথিবীর উপরে আছে এবং যা তাঁর নীচে আছে, সেই সবকিছু ব্রহ্মারও পূর্বের শাস্ত্রের মধ্যে একত্রিত করা হয়েছে। এতে কোনো সংশয় নেই।



এইখানে প্রশ্ন হচ্ছে, মূল শ্লোকের মধ্যে পৈতামহে শব্দের ব্যবহার করা হয়েছে কিন্তু হরিদাস সিদ্ধান্ত বাগীশ এই পৈতামহে শব্দের অর্থ দিয়েছেন ব্রহ্মসংহিতা!! কিন্তু সংস্কৃত মহাভারতের মধ্যে এই পৈতামহে শব্দের অর্থ দিয়েছেন ব্রহ্মা। সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মাকে প্রজাপতি এবং ব্রহ্মাণ্ডের সর্বপ্রথম মানব সৃষ্টিকারীর কারণে উনাকে পিতামহ বলা হয়ে থাকে।

কিন্তু কিভাবে এই পৈতামহে শব্দের অর্থ ব্রহ্মসংহিতা দিলেন তা কোনোভাবেই আমার বোধগম্য হচ্ছে না, ভাঁওতাবাজির একটা সীমা থাকার দরকার আছে কিন্তু এই পাঁঠা ছাগল সেই সীমাটাও লঙ্ঘন করে ফেলেছে। নিজের সম্প্রদায়ের একটি বইয়ের প্রামাণ্যতা দেওয়ার জন্য এই কৈষ্ণব পাঁঠা ছাগলগুলো এইভাবে সনাতনী শাস্ত্র ও গ্রন্থের বিকৃতি করেছে। প্রকৃত অর্থে ব্রহ্মসংহিতা নামক বইটির কোনো প্রকার গ্রহণযোগ্যতা নেই এবং এই বইটির নাম ব্রহ্মসংহিতা না বলে ব্রহ্মচান্ডাল বলা অতি আবশ্যক বলে মনে করি।

তাছাড়া, উপরোক্ত শ্লোকের অনুবাদগুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ আমি তুলে ধরছি এখানে, দেখুন•••••


ভীষ্ম যুধিষ্ঠিরকে বলছেন, পুরাণ, ঋষি মুনিদের সৃষ্টি, সব তীর্থ, সব নক্ষত্র, গৃহস্থ, বানপ্রস্ত, ব্রহ্মচর্য ও সন্ন্যাস, চারপ্রকার যজ্ঞকর্ম সম্পাদনকারী পুরোহিত, ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, শূদ্র ও বৈশ্য, চার বিদ্যা, এইসব আগেই নীতিশাস্ত্রের মধ্যে দেওয়া হয়েছে এবং ইতিহাস, বেদ, ন্যায়, এইসব শাস্ত্রের তথ্য সেখানে বলা হয়েছে। এছাড়াও তপস্যা, জ্ঞান, হিংসা না করা, সব প্রাণীর উপরে দয়াশীল হওয়া, এমনকি এই পৃথিবীতে যত শাস্ত্র আছে এবং পৃথিবীর নীচে (অতল, বিতল, সুতল, তলাতল, মহাতল, রসাতল ও পাতাল) লোকালয়ে যত শাস্ত্র আছে তা সব ব্রহ্মার জন্মের আগে শাস্ত্রের মধ্যে বলা হয়েছে। এই কথার উপর কোনো প্রকার সন্দেহ থাকতে পারবে না।

এইসব নীতিশাস্ত্রের অর্থাৎ নীতি ধারণ করে যে রাজা নিজের রাজ্যে ও প্রজা শাসন করেন তাঁর এবং দেবতার মধ্যে কোনো প্রকার পার্থক্য নেই, সেই রাজা পরিপূর্ণ ভাবে দেবতা তুল্য।

মহাভারতের শান্তিপর্বের এই রাজধর্ম জ্ঞানপাঠ ভীষ্ম নিজের বংশকূল নবনতুন রাজা যুধিষ্ঠিরকে দিচ্ছিলেন। সেখানে এই পাঁঠাখোর ভন্ড, ভাঁওতাবাজ, বিকৃতিকারী ঢুকিয়ে দিয়েছে ব্রহ্মচান্ডাল নামক ব্রহ্মসংহিতা বইয়ের নাম এবং এইটা নিয়ে কৈষ্ণব লাফাইয়া উঠে, সত্যি হাসি পায়। এই ব্রহ্মসংহিতার অস্তিত্ব নেই এবং এইটার কোনো প্রকার গ্রহণযোগ্যতা নেই সনাতনী সমাজের মধ্যে।

কৈষ্ণবীয় সম্প্রদায়কে বলবো, তোমাদের কাছে তোমাদের লেখা বইয়ের গ্রহণযোগ্যতা থাকতে পারে এবং রাখো, তাতে কারো কিছু যায় আসে না কিন্তু সেই কাল্পনিক বইটি সনাতনী সমাজের লোকেদের উপরে চাপিয়ে দিতে এসো না, কেননা, এইটা প্রমাণিত হয় যে, এই বইটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক এবং তোমাদের তৈরি বা লেখা, আর তোমাদের লেখা কোনো কিছুই অন্য সবার হতে পারে না।

সবশেষে, এই কাল্পনিক সম্প্রদায়, বিকৃতিকারী মস্তিষ্ক, শাস্ত্র প্রক্ষিপ্তকারী, নিজেদের মনগড়া নবনতুন শাস্ত্রের জন্মদাতা সম্প্রদায়ের সুবুদ্ধির উদয় হোক এই কামনা রেখে শেষ করছি। "হর হর মহাদেব"

                      সর্বশাস্ত্রাণাং শিবমদ্বৈতম্
Share This Article :

TAMBAHKAN KOMENTAR

7599550894000336510