BLANTERVIO103
Thursday, April 30, 2020
পর্ব - ২
বলি নিয়ে প্রথম অধ্যায়ে হিন্দুধর্মবিরোধীদের মতবাদ খণ্ডন করা হয়েছিল। এবার দেখবো দেবীপুরাণ, দেবীভাগবত, কালিকাপুরাণ ও অনান্য পুরাণে পশু বলি আছে কি নেই। জানি এই সকল পুরাণকে ইস্কনীরা মানে না। ওরা ওদের মনগড়া শাস্ত্র ছাড়া বাকী কিছুই মানে না। কিন্তু এক শ্রেনীর শাক্ত, শৈব আছে যারা মা কালী, ভগবান শিবের পূজা করেও , পশুবলিকে নিন্দে করে মায়ের পূজার পদ্ধতিকে নিন্দা করছে। এতে কিন্তু তারা নিজেরা পাপ করে ইস্কনের অশাস্ত্রীয় পথকে মসৃণ করে যাচ্ছে। যাই হোক এবার দেখি দেবীপুরাণে মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ণ বেদব্যাস কি বলেছেন-

ব্যাসদেব, “দেবীপুরাণে” লিখেছেন- দেবতারা বলি দিয়ে দেবীর পূজা করেছেন-

বলিঞ্চ দদ্যুর্ভূতানাং মহিষাজামিষেণ চ
( দেবীপুরাণ... একবিংশোহধ্যায়ঃ... ৫ )

অর্থাৎ- তারা মহিষ – ছাগ বলি দেবীকে প্রদান করলেন।

উক্ত অধ্যায়ে লেখা প্রজাপতি ব্রহ্মা বলছেন-

জলদান্তে আশ্বিনে মাসি মহিষারিনিবর্হিণীম্‌ ।
দেবী সম্পূজয়িত্বা তু অষ্টমী হ্যর্দ্ধরাত্রিষু ।
যে ঘাতয়ন্তি সদা ভক্ত্যা তে ভবন্তি মহাবলাঃ ।।
( দেবীপুরাণ... একবিংশোহধ্যায়ঃ... ৯ )

অর্থাৎ- বর্ষা প্রভাতে আশ্বিন মাসে অষ্টমী অর্ধরাতে দেবী পূজা করিয়া যাহারা মহিষ ছাগ ছেদন করেন, তাহার মহাবলশালী হন।

এবার বিচার করুন সেইসব শাক্তরা দেবীর কাছে দুর্বলতা চাইবেন নাকি বল ? দেবী কিন্তু দুর্বল দের পূজা কখনোই নেন না। কারণা দুর্বলতা ও দুর্বলতাকে ঢাকার অহিংসা বাহানা- মা কিন্তু সহ্য করেন না।

দেবীপুরাণে অন্যত্র লিখিত আছে-

পদ্মস্থা চর্চ্চিকা রৌপ্যা ধর্মকামার্থমোক্ষদা ।
প্রেতস্থা সর্ব্বভয়হা নিত্যং পশুনিপাতনাৎ ।।
( দেবীপুরাণ... ত্রয়বিংশোহধ্যায়ঃ ... ১৬)

অর্থাৎ- কমলাসনা  দেবীমূর্তি আরোগ্য ধর্ম- কাম- অর্থ ও মুক্তি প্রদান করেন। প্রেতাসনা দেবী পশুবলি গ্রহণ করত নিত্য সর্ব বিধ ভয় হরণ করেন।

দেখুন শাক্ত গণ। মা প্রেতাসনা বলতে প্রেত বা শবের ওপর অধিষ্ঠিতা দেবী বোঝানো হয়েছে। কালী- তারা- চামুণ্ডা- বগলা – ষোড়শী এঁনারা সবাই শবাসনা। দেবীকে পূজা করলে দেবী নিজেই চতুর্বিধ ফল দেন। ত শাক্ত ভাইবোনেরা আপনাদের কি প্রয়োজন তিলক কেটে নিরামিষ খেয়ে বেড়ানোর ? দেবীর ওপরে কি বিশ্বাস হারিয়েছেন ? দেবীর চরণ ধরে থাকুন- চৌদ্দ ব্রহ্মাণ্ডে এমন কেও নেই যে দেবীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিজ ইচ্ছা প্রকট করে।

শুভনিশুম্ভ বধ করেছেন যে কৌশিকীদেবী তিনি বলি মাংসে খুব তৃপ্তা হন। উক্ত পুরাণেই লেখা-

বলিমাংসৌদনাহারাং কৃষ্ণগন্ধস্রজপ্রিয়াম্‌ ।
তুরুস্কাগুরুহোমেন বিকারিভয়নাশিনীম্‌ ।।
( দেবীপুরাণ... পঞ্চাশোহধ্যায়ঃ... ৩৮ )

অর্থাৎ- বলি, মাংস, অন্ন, নৈবদ্য এই দেবীর খুব প্রিয় । এই দেবীকে কৃষ্ণবর্ণ চন্দন , মালা দিতে হয় । তুরুস্ক , অগুরু ইত্যাদি দ্বারা হোম করলে দেবী সর্বভয় নাশ করেন ।

কুমারীদেবীও বলি প্রিয় । ঐ পুরাণেই লেখা-

রক্তবাসা বলিগন্ধা ক্ষৌদ্রমাংসাসবপ্রিয়া ।
পূজিতা বিধিবদ্দেবী হবনাৎ তুরগং শুভা ।।
( দেবীপুরাণ... পঞ্চাশোহধ্যায়ঃ... ১৮ )

অর্থাৎ- এই দেবী রক্তমালা ও রক্তবস্ত্র ধারণ করেন। বালিকার ন্যায় এই দেবী। মধু, মদ এবং মাংস এই দেবীর খুব প্রিয়। বিধিভাবে পূজা করলে এই দেবী সর্ব্বসিদ্ধি দান করেন ।

দেবীপুরাণে কার্ত্তিক মাসের চতুর্দশী ও অমাবস্যা তিথিতে বলি দিয়ে  দেবীর পূজা বিধান আছে-

তুলাস্থে দীপদানেন পূজা কার্য্যা মহাত্মনা ।
দীপবৃক্ষাঃ প্রকর্ত্তব্যা দীপচক্রাস্তথাপরা ।।
দীপযাত্রা প্রকর্ত্তব্যা চতুর্দ্দশ্যাং কুহূষ চ ।
সিনীবালীস্তথা বৎস তদা কার্য্যং মহাফলম্‌ ।
সর্ব্বশেষে প্রকর্ত্তব্যা বলিপূজাহোমোৎসবম্‌ ।
( দেবীপুরাণ... একনষষ্টিতমোহধ্যায়ঃ... ২৩-২৫ )

অর্থাৎ- কার্ত্তিক মাসে দীপমালা দান করে পূজা করবে। ঐ মাসের চতুর্দশী এবং অমাবস্যার দিন দীপমালা, দীপচক্র ও দীপবৃক্ষাদি নির্মাণ করিবে। ঐ দিবস বলি- পূজা- হোম করা কর্তব্য।

বন্ধুরা আপনারা দেখলেন কার্ত্তিক মাসের চতুর্দশী ও অমাবস্যাতে দেবীর পূজায় বলি দিতে স্বয়ং বেদব্যাস ঋষি “দেবীপুরাণ” এ উল্লেখ করেছেন। কার্তিক মাসের অমাবস্যা “দীপান্বিতা কালীপূজা” হয়। তখন যদি মা কালীর পূজায় ছাগ- মেষ বলি হয়, ত সেটা ত দেবীর পূজার অঙ্গ। সেখানে আপত্তি কিসের ? তাহলে ত হিন্দু ধর্মের বিধিবিধানকে অস্বীকার জানানো হয়।

দেবীপুরাণেই স্বয়ং ব্রহ্মা বলেছেন- উদর তৃপ্তির জন্য প্রানী হত্যা করে খেলে পাপ। কিন্তু যজ্ঞের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করে খেলে পাপ নেই। আসুন দেখা যাক।

যজ্ঞার্থে পশবঃ সৃষ্টা যজ্ঞেম্বেষাং বধঃ স্মৃতঃ ।
অন্যত্র ঘাতনাদ্দোষো বাঙ্মনঃকায়কর্ম্মভিঃ ।।
দেবার্থে পিতৃকার্যেষু মনুষ্যর্থে পুরন্দর ।
বধয়ন্‌ ন ভবেদেন অন্যথা মহাকিল্বিষী ।।
( দেবীপুরাণ... সপ্তনবতিতমোহধ্যায়ঃ...   ৩-৪ )

ব্রহ্মা বলিলেন, হে শত্রু ! যজ্ঞের জন্যই পশুর সৃষ্টি । যজ্ঞেই তাহাদের বধ বিহিত আছে । যজ্ঞের কার্য্যে , বাক্যে , মন , কায় ও কর্ম ছাড়া বাকী কর্মে ঘাত করলে পাপ হয়। দেবকার্য্যে, পিতৃকার্য্যে ও মনুষ্যকৃত্যে পশুবধ করিলে পাপ হয় না। ইহার বিপরীতে পাপ হয় ।

ত শাক্ত শৈব ভাই বোনেরা, এবার বুঝলেন। পরবর্তী কালিকাপুরাণ, দেবীভাগবত , ব্রহ্ম পুরাণ ও অন্য পুরাণ থেকে বলির স্বীকৃতী রেফারেন্স সহ দেওয়া হবে। বেদব্যাস যতগুলি পুরাণ লিখেছেন, প্রায় সবগুলিতেই বলির প্রামান্য ও স্বীকৃতী দিয়েছেন। দেখুন আমরা মাছ- মাংস- ডিম যা খাই- মনে মনে ভাবুন ভেতরের ব্রহ্মযজ্ঞে ভগবানকে আহুতি দিচ্ছেন। এই যে নিরামিষ দৈ- অনুবীক্ষন যন্ত্রে দেখুন এতে কত উপকারী ব্যাকটেরিয়া আছে। সেগুলো দৈ খাওয়ার সময় কি হয় ? গাছের যদি চলন- গমন ক্ষমতা থাকতো, তাহলে তুলসী পত্র আর  গন্ধরাজ – বেলী ফুল ছেড়ার সময় তারা চিৎকার করতো। গাছের ফল পেড়ে খাওয়া মানে গর্ভস্থ ছাগলের ভ্রুণ ফাটিয়ে শিশু ছাগল খাওয়া। গাছের বীজে নতুন প্রান থাকে। ত আমরা কি ধান, গম খাই না ? এই জগতে নিরামিষ আমিষ বলে কিছু হয় না। পশু মাংস খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু বিধিবিধান শাস্ত্রকারেরা রচনা করেছিলেন। কেন এমন নিয়ম  সেটা অন্তিম পর্বে লেখা হবে। তাই সরকার দ্বারা স্বীকৃত পশু যেমন পাঠা- মুরগী- ডিম- খাসী- কাঁকড়া- মাছ  সানন্দে খান। কোনো পাপ নেই।
Share This Article :

TAMBAHKAN KOMENTAR

7599550894000336510