BLANTERVIO103

বেদ না গীতা ? কোনটি শ্রেষ্ঠ ধর্মগ্রন্থ ?

বেদ না গীতা ? কোনটি শ্রেষ্ঠ ধর্মগ্রন্থ ?
Sunday, April 19, 2020

সৃষ্টির এত কাল গত হওয়ার পরেও যখন মানুষ এমন প্রশ্ন করে তখন বুঝা যায় আমরা কতটা ধর্মজ্ঞানী। আমাদের ধর্মের অস্তিত্ব বিলিন হওয়ার রাস্তাটা আমরা নিজেরাই খুঁড়ে যাচ্ছি। তা না হলে বেদ শ্রেষ্ঠ না গীতা শ্রেষ্ঠ সেটি নিয়ে বিতর্ক করার কোন প্রয়োজনই পরে না। কারণ বেদ যে জ্ঞান দেয়, গীতাও একই জ্ঞান দান করে। দুটোই ঈশ্বর প্রদত্ত জ্ঞান ভাণ্ডার। আর সেজন্যই বেদ এবং গীতার জ্ঞানে সাংঘর্ষিক কিছু নেই। গীতার ৩/১৫ শ্লোকে সুস্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বেদ পরমব্রহ্ম হইতে উদ্ভূত’।

যদি আপনি গীতাকে কেবল কাগজের পুস্তকে সীমাবদ্ধ করেন তখন আপনার মনে এই প্রশ্ন আসবে যে কোনটি শ্রেষ্ঠ।  কিন্তু আপনি যদি বেদ এবং গীতার জ্ঞানকে বুঝতে পারেন, জানতে পারেন, তাহলে দেখবেন এই দুই গ্রন্থ থেকে যে জ্ঞান প্রসারিত হয়েছে তাতে কোন ভেদাভেদ নেই।

গীতা বেদের জ্ঞানকাণ্ডের সারগ্রন্থ। যেখানে আধ্যাত্মিক কর্মসাধনের রাস্তা উপলোব্ধি করানো হয়েছে। গীতার এই জ্ঞান কেবল যুদ্ধের সময় থেকেই প্রচলিত নয়। এই জ্ঞান শাশ্বত, সনাতন।

সেজন্যই বেদ মন্ত্র আর গীতার অনেক শ্লোক প্রায় হুবুহু এক। শ্রী কৃষ্ণ যেমন যোগযুক্ত হয়ে গীতাতে বলেছেন,
‘অহং ওষধীষু, বনষ্পতিষূ’
ঠিক তেমন ভাবেই বেদের ঋষিরাও ঠিক একই ভাবে বলেছেন,
‘অহং ওষধীষূ’ ভুবনেষূ অহং বিশ্বেষূ ভূবনেষূ অন্তঃ;’ ‘অহং রুদ্রেভির্ব্বসুভিশ্চরাম্যহং’ [ঋগ্বেদ]।

এদিকে কৃষ্ণবাক্য, ‘অহং সর্বস্য প্রভবো মত্তঃ সর্বং প্রবর্ততে’ এবং
ওদিকে ঋষিবাক্য ‘অহং বিশ্বম্ ভূবনম্ অভ্যভবম্’ - কি ঠিক একই রূপ নয় ?
তাহলে কেন ভেদাভেদ করছেন ?

যজুর্বেদের ৪০/১৫ মন্ত্রে বলা হয়েছে মৃত্যুর সময় পরামাত্মার নাম ওঁ-কার স্মরণ করো। একই কথা গীতার ৮/১৩ শ্লোকেও রয়েছে। এভাবে উদাহরণ অনেক অনেক দেওয়া যাবে।

অনেকেই বলেন শ্রী কৃষ্ণ গীতায় বলেছে বেদে তিন গুনের আলোচনা হয়েছে, কিন্তু অর্জুনকে নির্গুণ হতে বলা হয়েছে। তাই বুঝা যায় বেদ থেকে গীতা শ্রেষ্ঠ।  এই ধরণের পাবলিক ব’কলম জ্ঞান ধারণ করেন।
কারণ এরা জানেনা যে কোন গ্রন্থই তিন গুনের ঊর্ধে নয়। পৃথিবীর যা কিছু আছে সব তিন গুন দিয়েই পরিচালিত। তবে এই জ্ঞানকে ধারণ করেই আস্তে আস্তে নির্গুণ হওয়া সম্ভব। যেমন কোন মূর্খ কেবল বই থেকে বিদ্যালাভ করলো। কিন্তু পরিবেশগত সংস্কার তার ভিতর নেই। অর্থাৎ শ্রদ্ধা নেই। তাহলে কি সেই বিদ্যা শ্রেষ্ঠ হবে ? বিদ্যা অর্জনের সাথে সাথে পরিবশগত সংস্কার ধারণ করতে হবে। বিদ্যাকে শ্রদ্ধা করতে হবে। অহংকার ত্যাগ করতে হবে। বিনয়ী হতে হবে। তবেই তো সে সম্মানীয় শিক্ষিত মানুষ হবে!

সুতরাং গীতা বা বেদ যা কিছুই বলুন না কেন, কোনটাই আপনাকে নির্গুণ করে দিতে পারবেনা। আপনাকে সেই শ্বাশত জ্ঞানকে ধারণ করতে হবে। ত্রিগুণাত্মক বিদ্যা অর্জনের পর যখন নিজের আত্মাকে উপলোব্ধি করতে সমর্থ হবে তখনই নির্গুণ হওয়া সম্ভব। এখানে নির্গুন অর্থ গুণশূন্য নয়। তিন গুনের ঊর্ধে চলে যাওয়াই নির্গুণ হওয়া। যেমন ভাবে নিরাকার ঈশ্বর অর্থ ‘ঈশ্বর নেই’ এমন নয়, বরং ঈশ্বরকে সর্বভূতেষু চিন্তা করা।

তুষার সরকার
Share This Article :

TAMBAHKAN KOMENTAR

7599550894000336510